ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতেই বাবাকে খুন!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতেই বাবাকে খুন! ফাইল ফটো

রাজশাহী: প্রায় ২৫ বছর আগে মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন বাবা আজিজুল আলম আসাতুল (৫৭)। এরপর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন ২২ বছর।

কিন্তু এতদিন সাজা ভোগের পর কারাগারে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন আসাতুল। করোনাকালীন সময়ে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি পান সেই আসাতুল। কিন্তু পরিবারে ফিরলেও তার জায়গায় হয়নি। শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলের হাতেই খুন হতে হয়েছে সেই বাবাকে।

ঘটনার পর রক্তমাখা পোশাকসহ তার ছোট ছেলেকে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন৷ ঘটনাটি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রত্যন্ত চক আমদপুর গ্রামের। পুলিশ এ ঘটনায় আটক নিহতের ছোট ছেলে তারেক রহমান সনিকে (২২) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার (১৩ মে) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে ফারুক হোসেন বাদী সনিকে আসামি করে বাঘা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। নিহত আজিজুল আলম আসতুল উপজেলার চক আমোদপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব প্রামাণিকের ছেলে।

মামলার বাদী ফারুক হোসেন জানান, ১৯৯৮ সালে তার মা পারুল বেগমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা আজিজুল আলম আসতুল। হত্যার দায়ে বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। কারাগারে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তার বাবা। দীর্ঘ ২২ বছর সাজা খাটার পর দুই বছর আগে বিশেষ বিবেচনায় সরকার তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। এরপর তার বাবা বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু বাড়ি ফিরেও তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। পরে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হতো। কিছু দিন আগে ঘরের জানালা ভেঙে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তার বাবা। এরপর থেকে আর বাড়ি আসেননি। তিনি গ্রামের বিভিন্ন গাছতলায় থেকে বেড়াতেন।

শুক্রবার (১২ মে) সকালে চক আমোদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের পুকুর পাড় থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ মেলে। পরে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রাজশাহীর বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম জানান, মরদেহের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ প্রথমেই হত্যার সন্দেহ করে। পরে নিহতের ছোট ছেলে তারেক রহমান সনিকে সন্দেহভাজন হিসেবে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, গত  বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাতে তার বাবা তাকে মারপিট করলে সেও বাবাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এরপর তার বাবা মারা গেলে তার মরদেহ নিয়ে পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে আসেন।

ওসি বলেন, তারেক রহমান সনি পুলিশকে জানায়, তার বাবা কারামুক্ত হয়ে বাড়িতে আসার পর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তিনি তাকে প্রায়ই মারপিট করতেন। একদিকে মাকে হত্যা; তারপর বাড়ি ফিরে তাকেও মারপিট করা হয়। এতে তিনি নিজে আর স্বাভাবিক থাকতে পারেনি।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে ফারুক হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর প্রাথমিকভাবে খুনের দায় স্বীকার করলেও তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়ে। রোববার অথবা সোমবার এ রিমান্ডের শুনানি হতে পরে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। #

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।