ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ডেকে এনে দুই বন্ধু মিলে ধর্ষণের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ডেকে এনে দুই বন্ধু মিলে ধর্ষণের অভিযোগ প্রতীকী ছবি

লক্ষ্মীপুর: দুই সপ্তাহের প্রেম। সেই সুবাদে বিয়ের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ে ১৫ বছরের কিশোরী।

পরে তাকে ফিরতে হয়েছে প্রেমিক এবং তার বন্ধুর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়ে।

এমন অভিযোগ উঠেছে,  লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপ্তা এলাকার বাবর নামে এক যুবক ও তার বন্ধুর বিরুদ্ধে।  

আরও অভিযোগ উঠেছে, এই ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের সদস্যদের মুখ না খুলতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।  

ভিকটিম যেন কারো সঙ্গে কথা বলতে না পারে সেজন্য ওই ইউপি সদস্য ভিকটিমকে তার নিজের বাড়িতে রেখেছেন বলে অভিযোগ তার মায়ের। যে কারণে থানায় মামলা দিতেও যেতে পারছেন না তারা।

ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপ্তা সংলগ্ন চর মনসা গ্রামে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাবরের সহযোগীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ঘটনার বিবরণে কিশোরী জানায়, অভিযুক্ত বাবর পেশায় একজন ট্রাক্টর ও ধানকাটা মেশিনের চালক। তাদের বাড়ির পাশের জমি থেকে মেশিনের সাহায্যে বোরো ধান কাটে বাবর। এ সুবাদে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় তার।  

বাবর তার মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তাকে বিয়ের করার আশ্বাস দেন বাবর। এতে সে রাজি হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  

কিশোরী আরও জানায়, বাবর তাকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় এবং চার লাখ টাকা কাবিন করারও সিদ্ধান্ত নেয়। রাজি না হলে তাকেসহ তার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেয় বাবর। পরে গত রোববার (২৮) সন্ধ্যার পর বাবর কিশোরীকে নিয়ে যেতে তাদের বাড়ির পাশে একটি রিকশা পাঠায়। কিশোরী মেয়েটি পরিবারের সকলের অগোচরে ওই রিকশায় করে সুতারগোপ্তা এলাকায় যায়। বাবর তাকে নামিয়ে একটি ফসলি মাঠে নিয়ে যান। এ সময় কিশোরীর মোবাইল ফোনটি রেখে দেন তিনি। মাঠে বাবরের এক বন্ধু অপেক্ষায় ছিল। পরে তার আরও এক বন্ধু সেখানে চলে আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে কিশোরী ফিরে যেতে চায়। এতে তিনজনের সঙ্গে ওই কিশোরীর হাতাহাতি হয়।  

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, ঘটনার এক পর্যায়ে বাবর তাকে প্রথমে ধর্ষণ করে, পরে তার অন্য বন্ধু তাকে ধর্ষণ করেছেন। অন্যজন তাকে কিছু করার সুযোগ পাননি। পরে তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকা সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে তাকে রেখে পালিয়ে যায় বাবর ও তার বন্ধুরা। রাতে সেখানকার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে এবং বাড়ির লোকজনের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরদিন সকালে ওই বাড়ির লোকজন কিশোরীকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়।  

কিশোরী অভিযোগ করে বলেন, বাবর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আমাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে প্রতারণা করেছেন। বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন। তাই তার প্রলোভনে রাজি হই। কিন্তু তিনি এবং তার বন্ধু আমার সর্বনাশ করেছেন। বাবরের সঙ্গে যে দুজন ছিলেন, তাদের আমি চিনতে পারিনি, তবে দেখলে চিনব।

মেয়েটির মা জানায়, আমার কিশোরী মেয়ের সর্বনাশ করেছে বাবর নামের ওই ছেলে। আমি স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়েছি। মেম্বার বলেছে বিচার করে দেবে। কিন্তু তিনদিন (মঙ্গলবার পর্যন্ত) পার হয়ে গেল, এখনো কোনো বিচার পাইনি। মেম্বার বলেছে- 'মেয়েকে তার বাড়িতে রেখে আসতাম, এলাকার কেউ যাতে কিছু জিজ্ঞেস না করতে পারে। সাংবাদিক এলেও যেন তাদের কাছে কিছু না বলি। যা বলার মেম্বার বলবেন।  

মেয়েটির বড়ভাই ইমন বলেন, আমার বোনের ক্ষতি করেছে। মেম্বার বিচার করবে বলেছে। তিনি কিছু না করলে আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে।  

এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম অভিযুক্ত বাবরের পক্ষ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। তাই বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ এবং তালবাহানা করছেন তিনি।  

এ অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাবর নামে এক ছেলে ঘর থেকে বের করে যায়। তাকে নাকি একটি ফসলের মাঠে নিয়ে গেছে। সেখানে মেয়েটি জানতে পারে বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তান আছে। তাই মেয়েটি বিয়ে না করে পালিয়ে গিয়ে রাতে এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরদিন বাড়িতে আসে।  

এখনও কেন ঘটনার বিচার হচ্ছে না প্রশ্নে তিনি বলেন, মেয়ে এবং ছেলে আমার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও ঘটনাস্থল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো পক্ষ বিচার চায়নি। পরিষদে বা আমার কাছে লিখিতও দেয়নি।  

মেয়েটি দুইজনের হাতে ধর্ষণ হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি।  

ঘটনাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মো. সোহেল রানাকে অবহিত করা হলে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।