রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সন্ধানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি ভুঁইফোড় এনজিও সংস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতারিত ১৫/২০ জন ভুক্তভোগী আমেরিকান প্রবাসী মোমিন মণ্ডলের বাড়ির সামনে ভিড় করে আছেন।
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মোছা. হাজেরা বেগম বলেন, ২ লাখ টাকা ঋণের আশায় গত বুধবার আমি ২০ হাজার ৩শ টাকা জমা দিয়েছিলাম আজকে আমার লোন দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখন এসে দেখি এনজিওর লোকজন পালিয়েছে। আমি হাওলাত (ঋণ) করে টাকা দিয়েছিলাম তাদের, এখন আমি এ টাকা কীভাবে পরিশোধ করব।
একই ইউনিয়নের গৌরাঙ্গপুরের ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি বিনিময়ে আমাকে ১ লাখ ৫০ হাজার লোন টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি সুদ করে এনে এই টাকা দিয়েছি এখন আমার উপায় কি।
পাংশা পৌরসভার মৈশালা এলাকার ভ্যানচালক হেলাল বলেন, ধার ঋণ করে এনে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম আজকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। বুধবার শুনতে পাই তারা পালিয়েছে। অফিসে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। সকালে আমার ভ্যান বিক্রি করে যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম তার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি, এখন আমার দিন চলবে কীভাবে।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ১০/১২ দিন আগে সন্ধানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে এনজিও সংস্থার লোকজন পাংশা উপজেলা এবং কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে অল্প লাভের বিনিময়ে লোন দেওয়ার কথা বলে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে গ্রাহক প্রতি ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। গত ২২ জুন লোন দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তারা লোন না দিয়ে প্রতারণা করে পালিয়েছে। ভুক্তভোগীদের ধারণা অনুযায়ী কয়েকশ গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখের বেশি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এই ভুঁইফোড় এনজিও সংস্থা।
তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন এনজিও সংস্থার লোকজন আনুমানিক ১০ দিন আগে মোমিন মণ্ডলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর গত বুধবার তারা গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারা আরও বলেন, এর সঙ্গে বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মীর সখ্যতা থাকতে পারে। কারণ সে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই ভুঁইফোড় এনজিও সংস্থা এখানে কীভাবে এলো তা বাড়ির দায়িত্বে থাকা আমেনা খাতুন নিপা ওরফে লক্ষ্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি এবং এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেনি।
পাংশা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানটি কিছু গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে আমার দপ্তরে নিবন্ধনকৃত সমিতির তালিকা যাচাই করে দেখেছি ওই নামে কোনো সমবায় সমিতি নিবন্ধিত নাই। পরে আমি ও আমার সহকর্মী মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওই বিল্ডিংয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড নাই, সেখানে অন্য কোম্পানির একটি সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। এবং বিল্ডিং এর প্রতিটি রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই বেনামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে, পাংশা উপজেলাবাসী কেউ সমবায় সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তা উপজেলা সমবায় দপ্তরে উক্ত প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত কিনা তা যাচাই করে দেখার জন্য অনুরোধ রইল। এবং এরকম ভুয়া কোনো সংগঠন যদি কোথাও হয়ে থাকে তা অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে সমবায় দপ্তরকে জানানোর আহ্বান করছি।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি জেনে উপজেলা সমবায় অফিসারকে পাঠিয়েছিলাম। সংগঠনটি নিবন্ধনহীন। এখন প্রতারিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
আরএ