পিরোজপুর: ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনায় নিহতদের আটজনই পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার। শনিবার (২২ জুলাই) সকালে ভান্ডারিয়া-বরিশালগামী যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে ১৭ জন যাত্রী নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টায় প্রায় ৬৫-৭০ জন যাত্রী নিয়ে বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে একটি বাস বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়ে ঝালকাঠি সদরের ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পুকুরে পড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই ১৩ জন যাত্রী নিহত হন এবং কমপক্ষে ৩০ যাত্রী আহত হন। আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসাপাতাল ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আর চার যাত্রী মারা যান। নিহতদের মধ্যে আটজনের বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলায় এরা সবাই চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন।
নিহতরা হলেন-জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভান্ডারিয়া গ্রামের পান্না বেপারীর ছেলে তারেক ব্যাপারী (৪২), উত্তর পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের ছালাম মোল্লা (৬৫) ও তার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পশারী বুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদরের মেয়ে সুমাইয়া (৬), পূর্ব ধাওয়া (পোদ্দার খাল) গ্রামের মা রহিমা বেগম (৭০) ও তার ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার (৫০), উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭৫) ও তেলিখালী গ্রামের রাসেল সিকদারের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)।
নিহত সালাম মোল্লার ছোট ছেলে রাসেল মোল্লা জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য বাবাকে নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বরিশালে যাচ্ছিলেন। তিনি চালকের পেছনের আসনে বসা ছিলেন। বাস ছাড়ার পর থেকে বাসের চালক বাড়তি যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ নিয়ে গাড়ি চালাতে তিনি অমনোযোগী ছিলেন। গাড়িটি ছত্রকান্দা বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করার পরই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। এসময় বেশিরভাগ যাত্রী পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সময় আমি বাসের জানালা দিয়ে বের হতে পাড়লেও ঘটনাস্থলেই আমার বাবা ও বড় ভাই ট্রাক ড্রাইভার শাহীন মারা যান।
নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তার মা মাহিনুর বেগম ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা আক্তার বার বার সজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। ভান্ডারিয়া বাজারের নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক ব্যাপারী বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামী হারানোর শোকে তার স্ত্রী কেয়া অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। তার শ্বশুর কামাল হোসেন জানান, শিশু পুত্র মাহাদিকে (৭) নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিল তারেক। শিশুটি বেঁচে গেলেও তার বাবা ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত শিশু পুত্র মাহাদি জানায়, বাসটি যখন পুকুরে পড়ে ডুবে যাচ্ছিল কে যেন তাকে জানালা দিয়ে টেনে বের করে আনে। দুর্ঘটনায় তার ডান হাতটি ভেঙে গেছে।
নিহত ৬ বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়ার মা পিয়ারা বেগম জানান, মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে মেয়েটি মারা যায়। আমি কোনো রকমে জানালা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে বের হই। ততক্ষণে দেখি সে মারা গেছে।
পূর্ব ধাওয়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ জানান, পশাবুনিয়া জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম হাওলাদার তার মা রহিমা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুজনেই মারা যান। আবুল কালামই ছিলেন ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
নিহতের ছেলে মাদরাসার ছাত্র মো. রুবেল জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ায় সংসার চালানোর মত কেউ রইল না।
এ ঘটনায় ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মো. ফাউজুর রশিদ খসরু ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজুল ইসলাম একটি শোক বার্তা দিয়েছেন।
ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান জানান, নিহতদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। এমন দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
আরএ