ঢাকা, সোমবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যন্ত্রণাময় মৃত্যু দিতেই রবিউলকে জীবিত বস্তাবন্দি করা হয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৩
যন্ত্রণাময় মৃত্যু দিতেই রবিউলকে জীবিত বস্তাবন্দি করা হয়

সাভার (ঢাকা): ফিল্মি স্টাইলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নৃশংস নির্যাতনের পর যন্ত্রণাময় মৃত্যু নিশ্চিত করতে জীবিত অবস্থায় বস্তাবন্দি করে মহাসড়কের পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল মো. রবিউলকে। তাকে তুলে নেওয়া থেকে শুরু করে হত্যা অবদি ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে আশুলিয়ায়।

নিহত রবিউল (২২) আশুলিয়ার গাজীরচট চারালপাড়া এলাকার মো. আলতাফের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার ইউনিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রবিউল রিকশাযোগে কোথাও যাচ্ছিলেন। এ সময় রিকশাটি স্থানীয় আলম ভূইয়ার ছেলে ইশতিয়াকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে রবিউলের স্থানীয়ভাবে পরিচিত হুরমুজ আলীর ছেলে সোহাগ তার পক্ষ নিয়ে ইশতিয়াককে চড়-থাপ্পড় দেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত নয়টার দিকে সোহাগ ও ভূইয়া পরিবারের মধ্যে কয়েক দফায় মারামারি করে। প্রথম ধাপে ভূইয়া পরিবারের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভূইয়া গ্রুপ সোহাগের বাড়িতে হামলা করে। ওই ঘটনায় সোহাগকে প্রধান ও রবিউলকে দ্বিতীয় আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়। মূলত, ক্ষোভের বশেই রবিউলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ভূইয়া পরিবারের লোকজন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ভাড়ারিয়া বাজার এলাকার রাস্তায় পুকুরের পাশে একটি গাড়ি থেকে বস্তা ফেলা হয়। তারা বস্তাটিকে নড়তে দেখেন। পরে সেটির মুখ খুলে রবিউলকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন তারা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পান্নু মিয়া জানান, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান। রবিউলের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার দুই পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এক পা ও হাতের রগ কেটে ফেলা হয়েছে।

হত্যার প্রেক্ষাপট নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রবিউলকে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পূর্ব বিরোধের জের ধরে যন্ত্রণাময় মৃত্যু দিতে রবিউলকে জীবিত বস্তাবন্দি করা হয়। মূল উদ্দেশ্যই ছিল হত্যা।

নিহতের বোন ফারজানা আক্তার ঝিলিক বলেন, রবিউল পোশাক কারখানায় সাব-কন্টাক্ট্রর হিসেবে কাজ করতেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আসামিরা আমার ভাইকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে আলম ভূইয়ার বাড়িতে নিয়ে তাকে মারধর করে। এরপর জীবিত অবস্থায় একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে বস্তাবন্দি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধামরাই থানার ভাড়ারিয়া এলাকার একটি পুকুরে ফেলে হত্যা করে। আমার ভাইয়ের হাত-পা ভেঙে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ওরা। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাকারীরা সোমবার সকালে রবিউলকে রাস্তা থেকে প্রথমে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে একটি বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করে। বেশ আহত অবস্থায় তাকে একটি বস্তায় ভরে গাড়িতে তুলে ধামরাইয়ে মহাসড়কের পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। তখনও রবিউল জীবিত ছিলেন। স্থানীয়রা পুকুর থেকে বস্তাসহ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে নেওয়ার পথেই রবিউলের মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় পরে মামলা হয়। পরে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়।

তিনি বলেন, রবিউলের মৃত্যুর পর বোঝা যায় এটি পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় মামলা হয়। আমরা তদন্ত করে গতকাল সোমবার (৩১ জুলাই) আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার হাজী আলম ভূইয়া (৫৫), সেলিম ভূইয়া (৪০), আজহার ভূইয়া (২৪), ফারুক ভূইয়া (৩৫) ও ফরহাদ ভূইয়াকে (৩০) গ্রেপ্তার করি। তবে মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা ছাড়া মামলার প্রথম আসামি আলম ভূইয়ার বড় ছেলে রাশেদ ভূইয়া; ছোট ছেলে ইশতিয়াক ভূইয়া দ্বিতীয়। পরে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ফরহাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিরা কাস্টডিতে আছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা গাড়িটি আইডেন্টিফাই করতে পারিনি। গ্রেপ্তার আসামিরাও মুখ খুলছেন না। আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত সেটি মঞ্জুর করলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেখানেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৩
এসএফ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।