ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সর্বোচ্চ ডেঙ্গুরোগী রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
সর্বোচ্চ ডেঙ্গুরোগী রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

ঢাকা: দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৯ সালে।

চলতি বছর অতীতের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন সর্বোচ্চ আক্রান্ত রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশ।    

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে আড়াই হাজার লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে ছয় হাজার রোগীর মধ্যে ৫৮ জন মারা যান। ২০০৩ সালে ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০; ২০০৪ সালে চার হাজারের মধ্যে ১৩; ২০০৫ সালে এক হাজারের মধ্যে চার; ২০০৬ সালে দুই হাজারের মধ্যে মৃত্যু হয় ১১ জনের। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কারও মৃত্যু হয়নি।

২০১১ দেড় হাজারের রোগীর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ৬৭১ জনের মধ্যে একজন, ২০১৩ সালে প্রায় দুই হাজারের মধ্যে দুজন রোগী মারা যান। ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২০১৫ সালে তিন হাজারের মধ্যে ছয়জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজারের মধ্যে ১৪ জন, ২০১৭ সালে তিন হাজারের মধ্যে আট জন, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান। ২০২০ সালে দেড় হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় চারজনের। আর ২০২১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় সাড়ে ২৮ হাজার, মারা যান ১০৫ জন। ২০২২ সালে সর্বমোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং মোট ২৮১ জন মারা যান।

চলতি বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪১ হাজার ৭০৪ জন ও সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৪০ হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। চলতি বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৩০০ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৮৭ জন মারা যান।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সরকারি যে হিসাব, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবেই হোক বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো বেশ বদলে গিয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দিনে এবং রাতে কামড় দেয়। এছাড়াও ডেঙ্গু এখন শুধু পরিষ্কার পানিতে নয় যেকোনো পানিতেই জন্মাতে পারে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণও বদলে গিয়েছে, উপসর্গেও পরিবর্তন এসেছে। সবমিলিয়েই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যেভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আমরা যদি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই তাহলে চলতি বছরে হয়তো ডেঙ্গুর নথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হবে এবং সেটা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাজধানীতে হয়তো ডেঙ্গুরোগী অনেক বাড়বে না। তবে ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলায় বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমনও হতে পারে ২০১৯ সালের রেকর্ড অতিক্রম হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুরোগের বাহক এডিস মশা তার ধরণ বদলে ফেলেছে। ডেঙ্গুরোগ একটা সময় ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দেশের প্রতিটা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মধ্যেও বিষয়টি যুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
আরকেআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।