ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধভাবে বিএনপি নেতার বালু উত্তোলন, হুমকিতে ফসলি জমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
অবৈধভাবে বিএনপি নেতার বালু উত্তোলন, হুমকিতে ফসলি জমি

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আবুল খায়ের নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। মাটি দিয়ে পানি প্রবাহের সরকারি খালও ভরাট করছেন তিনি।

 

উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের পাশে শৈরশৈই গ্রামে একটি গভীর পুকুরে ড্রেজার দিয়ে এ বালু তোলা হচ্ছে। এতে আশপাশের কয়েকশ একর ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। বাধা দেওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর মারমুখী হয়ে ওঠেন খায়ের।

এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধে ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন সাদেক সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে গত ৮ আগস্ট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুনের নির্দেশে ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। ওই মেশিনসহ সরঞ্জাম এনে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রাখা হয়। কাউকে না জানিয়ে সেখান থেকে অদৃশ্য বলয়ে খায়ের মেশিনসহ সরঞ্জাম নিয়ে যান। এসব দিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করেন। এ ব্যাপারে বাধা দিতে গেলে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল পাটওয়ারীর ওপর প্রকাশ্যে মারমুখী হয়ে ওঠেন অভিযুক্ত আবুল খায়ের।

তিনি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি। তবে স্থানীয়ভাবে ‘বালু দস্যু’ নামে পরিচিত তিনি।

শৈরশৈই গ্রামে দিয়ে দেখা গেছে, আবুল খায়ের তার একটি জমিতে থাকা পুকুর থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে ওই পুকুর থেকে বালু তোলার কারণে ৩০ ফুটের বেশি গভীর গর্তে পরিণত হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে তিনি পুনরায় সেখান থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা শুরু করেছেন। এতে পুকুরের আশপাশে থাকা ফসলি জমি হুমকিতে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হোসেন ও আবু মিয়া জানান, খায়েরের জমিতে যাওয়ার শুরুতেই সরকারি খাল রয়েছে। মাটি ফেলে খালটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। এতে চাষাবাদ ও পানি প্রবাহে ক্ষতি হবে। বালু উত্তোলনের কারণে পুকুরটি গভীর গর্ত ও বিশাল আকৃতি ধারণ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, খায়ের বিএনপি করলেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির চৌধুরীর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে। সেখান থেকেই প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে বছরের পর বছর নোয়াগাঁওয়ের বিভিন্নস্থানে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে আসছেন। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘বালুদস্যু’ হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহেল পাটওয়ারী বলেন, ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কোনোভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া আশপাশের মানুষের অভিযোগ রয়েছে। খায়ের প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। ভূমি কর্মকর্তা মেশিনটি জব্দ করলেও পরে খায়ের তা নিয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের খালটিও খায়ের মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলেছে। তিনি আমার সঙ্গে জনসম্মুখে মারমুখী আচরণ করেছেন।

শৈরশৈই গ্রামের হারুক সাদেক বলেন, বালুদস্যু খায়ের কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। তার কারণে আমার পাশের জমি তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার চোখ রাঙানিতে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না।

অভিযোগকারী হারুন সাদেক আরও বলেন, খায়েরের পুকুরের পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশে আমার ৬ একর জমি রয়েছে। সেখানে আমি মাছের খামার করেছি। কিন্তু ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আমার জমি হুমকিতে রয়েছে। কারণ ড্রেজার মেশিন আশপাশের এলাকার জমির নিচ থেকে বালু টেনে আনে। এটি বন্ধ না করলে আমার মতো আরও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অভিযুক্ত আবুল খায়ের বলেন, বালু উত্তোলন করায় কারও ক্ষতি হচ্ছে না। প্রশাসনেরও আমাকে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। বালু তোলা অবৈধ নয়। যাতায়াতের জন্য সাময়িকভাবে খাল ভরাট করা হয়েছে। খাল থেকে মাটি সরিয়ে দেওয়া হবে। রামগঞ্জের অন্যস্থানের ড্রেজার বন্ধ হলে আমিও বন্ধ করবো।

বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির চৌধুরী বলেন, খায়ের নামে কাউকে আমি চিনি না। ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা অবৈধ। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।  

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনের ঘটনার একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ড্রেজার মেশিন জব্দের পর তা ফের নিয়ে গিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে খায়েরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

প্রসঙ্গত, ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২১ এ বলা হয়েছে, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়, জলাশয়-পুকুর থেকে হাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার, শ্যালো মেশিন চালিত লো-লিফট পাম্প বা এ ধরনের মেশিন চালিত যন্ত্র (যেমন ‘বোমা মেশিন’) ব্যবহার করে ড্রেজিং করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।