ঢাকা: স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের একটি পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয় ৭১ মিলনায়তনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক। বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের একটি পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সারাজীবন বাঙালির মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। যার ফলে মাত্র ৯ মাসের মাথায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় নিজেকে সাধারণ ভাবতেন, তার মধ্যে অহংকারবোধ ছিল না, যার ফলে তিনি সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দেশকে অতিদ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় এনেছিলেন। কিন্তু ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ আবার পেছনে পড়ে যায়।
বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে শেখ হাসিনার স্বপ্ন লালিত উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ড. আতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত ও সাহসী নাম। তিনি বাংলাদেশের নামকরণ করেছেন ও ধীরে ধীরে বাঙালির মানসপট গড়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরই কোটি বাঙালির কণ্ঠস্বর। তিনি পূর্বসূরী নেতাদের নির্যাস ধারণ করে বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বুকে আশা জাগিয়েছেন। তিনি ছিলেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রে ও পান্থজনের সখা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকেই তার ভাবাদর্শ দ্বারা মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ হাতে নেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের সংবিধান প্রণয়নসহ তিনি ২৫০ থেকে ৩০০ আইন প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধু গণমুখী প্রশাসন গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন গণমুখী প্রশাসন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। তার উন্নয়ন ভাবনা আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন দুর্দমনীয় আশাবাদী। তিনি এ জাতিকে দীর্ঘদিনের গোলামির শৃঙ্খল থেকে বঙ্গবন্ধু আমাদের শুধু স্বাধীন সার্বভৌম দেশই উপহার দেননি, তিনি আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি ও সাহস দিয়েছেন। তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শিখিয়েছেন। এছাড়া শিখিয়েছেন কীভাবে দেশপ্রেমিক হওয়া যায়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও অসীম সাহসিকতার পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর মতো দুরূহ মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করতে হবে এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আলম, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট কালো রাতে সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল ৯টায় প্রবাসী কল্যাণ ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর সংস্থার প্রধানদের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
জিসিজি/আরবি