মাদারীপুর: কোলাহল থেকে দূরে, পাড় বাঁধানো ঘাট, জলছোঁয়া স্নিগ্ধ বাতাস, নদীর মৃদু ঢেউয়ের শব্দ, জেলের ডিঙ্গি নৌকায় ভেসে বেড়েনো আর দূরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পদ্মাসেতু! সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লে প্রকৃতি যেন প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে নেমে আসে পদ্মার পাড়ে। আর এই প্রশান্তির ছোঁয়া পেতেই দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিকেলে পদ্মাপাড়ে ভিড় জমায় ভ্রমনপ্রেমীরা।
শহর বা মফস্বলের কর্মব্যস্ত মানুষ সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোয় একুঘেঁয়েমি কাটাতে কোলাহল থেকে দূরে একান্তে কিছু সময় কাটাতে এখন বেছে নিয়েছে পদ্মানদীর পাড়কে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর, সেতুর পশ্চিম পাড়ে নদীর পাড়ের দীর্ঘ নদী শাসন বাঁধ এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। বিকেলে সূর্যের তেজ কমে এলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তবে নদীর এই পাড়জুড়ে অনেকটাই কোলাহলমুক্ত থাকায় প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বেশি ফুটে উঠে বলে জানান ভ্রমনপ্রেমীরা। পদ্মার জলে সূর্য ডোবার দৃশ্য বেশ উপভোগ্য বলে জানান তারা।
সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে পদ্মাসেতু সংলগ্ন শিবচরের পদ্মাপাড় ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে নদী শাসন বাঁধে দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা মানুষের বিচরণ। কেউ বন্ধুদের নিয়ে, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে নিয়ে। বিকেল পাঁচটার পর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত এখানে দর্শনার্থীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় পশ্চিমাকাশের লালচে রঙের ছটার প্রতিবিম্ব পদ্মার পানিতে পড়ে পরিবেশকে আরও মোহনীয় করে তোলে।
ঢাকা থেকে আসা রিয়াদ আহমেদ নামের এক যুবক বলেন,শহর থেকে বের হয়ে একটু ভালো পরিবেশে সময় কাটাতে এখন পদ্মার পাড়ের বিকল্প নেই। আগে শিমুলিয়া ঘাটে যেতাম প্রায়ই। কিন্তু ওখানে প্রচুর লোক সমাগম। পরিবেশ খুবই কোলাহলপূর্ন। কিন্তু সেতু পার হয়ে শিবচরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার যে পদ্মার পাড়; তা অত্যান্ত মনোরম। এখানে কোলাহল নেই। নদীর পাড়ে নিরুবিলি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে সময়কে উপভোগ করা যায়।
আফসানা আক্তার নামের শিবচরের এক কলেজ ছাত্রী বলেন,বিকেলের পরিবেশ চমৎকার এখানে। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা নদীতে গোসল করছে। দূর-দূরান্ত থেকেও প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসে। সব মিলিয়ে মন ভালো হয়ে যাওয়ার মত পরিবেশ!
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর নদী শাসন বাঁধ দর্শনার্থীদের জন্য নতুন এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পদ্মানদীর সৌন্দর্য দেখতে হলে এখন পদ্মাসেতুর এই এলাকায় আসতে হবে। তাছাড়া লোকজন আসায় স্থানীয় অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের নতুন নতুন পথ তৈরি হয়েছে। এদিকে ভোরেও এখানে অনেকেই আসেন। কেউ নদী শাসন বাঁধে হাঁটে-দৌড়ায়। ব্যায়াম করে। আবার ভোরে পদ্মার তাজা মাছ কিনতেও অনেকে আসেন। এতে করে আমাদের নদী পাড়ের এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, নদীর পাড়ে দর্শনার্থী আসায় অনেকেই নদীর তাজা মাছ কিনে নিয়ে যায়। বিকেলেও নানা জাতের মাছ ধরা পড়ে। ইলিশ ধরা পড়ে নদীর এই অংশে। বিকেলে মাছ ধরে নৌকা পাড়ে আসতেই মাছ বিক্রি হয়ে যায়। ঘুরতে আসা লোকজন কিনে থাকেন। বেশ জমজমাট থাকে নদীর পাড়।
পদ্মাসেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে নাওডোবা বাজার হয়ে পুরাতন ফেরিঘাটের(কাঁঠালবাড়ী) সড়ক দিয়ে নদীর পাড়ে এলেই নদীশাসন বাঁধ চোখে পড়ে। দূরে পদ্মাসেতুও দেখা যায়। ঢাকা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বিকেলে পদ্মার পাড়ে ছুটে আসেন ভ্রমনপ্রেমীরা। পদ্মার পাড়ের অফুরন্ত বাতাস, স্বচ্ছ পানি আর নদী শাসন বাঁধে ঢেউয়ের আছড়ে পড়া__ সব মিলিয়ে মোহনীয় পরিবেশ ফুটে উঠে পদ্মার পাড়ে। আর এই দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন ভ্রমনপ্রেমীরা। ফেরার পথে পদ্মার ইলিশ আর ভূনা খিচুরি যেন ভ্রমনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে। ঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে নানা হোটেলও। স্থানীয়দের জীবিকা নির্বাহের নানান ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এই দর্শনার্থীদের ঘিরে।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৭০৩ ঘন্টা, আগষ্ট ১৯,২০২৩
এমএম