ঢাকা: আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে ভিয়েতনামের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভিয়েতনাম ইউনিয়ন অব ফ্রেন্ডশিপ অর্গানাইজেশনের (ভিইউএফও) প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যার সঙ্গে সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ এক বৈঠকে এ বিষয়ে সমর্থন চান।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ভিয়েতনামের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নূয়্যেন ফুওং ন্যার সঙ্গে ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজ সামিনা নাজ এক বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।
উভয়ের মধ্যে উষ্ণ অভ্যর্থনা বিনিময় শেষে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, শুধুমাত্র ভিয়েতনামের কূটনৈতিক জীবন না বরং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ, জনগণকে একে অপরের সান্নিধ্যে আনা, বিশেষত যখন কূটনীতির ধারণা পরিবর্তিত হয়ে জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, সে সময়ে ভিয়েতনাম ইউনিয়ন অব ফ্রেন্ডশিপ অর্গনাইজেনশনের (ভিইউ এফও) প্রেসিডেন্টের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যকার গভীর ঐতিহাসিক বন্ধন উল্লেখ করে দেশটির উন্নয়নের প্রশংসা করেন। উভয় দেশের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট হো চি মিন সবসময় দেশের জনগণের চিন্তা করেছেন এবং মুক্ত, স্বাধীন এবং সুখী সমৃদ্ধ দেশের জন্য তাদের সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন।
রাষ্ট্রদূতের জবাবে ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যা বলেন, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যেকার ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি উদাহরণ। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে সহযোগিতা এবং সম্পর্ক গভীরতর করার জন্য ভিয়েতনাম চেষ্টা করবে।
উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, স্বল্প জনবল নিয়ে কূটনৈতিক কার্যক্রম কিভাবে চালানো যায় তা রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের কাছে থেকে শেখার জন্য তিনি সবসময় ভিয়েতনাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং (ভিইউএফও) কর্মকর্তাদের উপদেশ দেন। রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ যেভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্জনসমূহকে তুলে ধরেন, তার প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ভিয়েতনামে দায়িত্ব পালনকালে, তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেন যে, ভিয়েতনামে কূটনীতিকদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ভিয়েতনামের সামাজিক কর্মকাণ্ডেরও অংশীদার হওয়া যায়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রাষ্ট্রদূত ভিয়েতনামের জনগণের কল্যাণে ভিয়েতনামের হাসাপাতালগুলোয় রক্তের অভাব বুঝতে পেরে মহামারী চলাকালীন সময়ে তিনবার দূতাবাসের স্টাফদের সঙ্গে তিনি নিজেই স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ভিয়েতনামের বন্ধু এবং বাংলাদেশিসহ অন্যান্য ব্যক্তিদেরও রক্তদানের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। সেইসঙ্গে অসহায় লোকদের খাদ্যদ্রব্য প্রদান করেন এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও হুইল চেয়ার প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, দু’দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামকে একত্রে কাজ করতে হবে। সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান এবং সবসময় একে অপরের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন পাসের বিষয়ে ঐকমত্য প্রদানে ভিয়েতনামের সমর্থনের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ)-এর একটি সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে ইচ্ছুক এবং এ বিষয়ে ভিয়েতনামের সমর্থন প্রত্যাশী।
রাষ্ট্রদূত ভিইউ এফও'র প্রেসিডেন্টকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি গঠন করার বিষয়ে ভিয়েতনাম নেতাদের কাছে একটি ধারণা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। যার ফলে দু’দেশের জনগণ একে অপরের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবে। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি, বৌদ্ধ পর্যটন, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যা সম্মত হন যে, এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন দু’দেশের জনগণকে আরও কাছাকাছি আনবে এবং পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
টিআর/এসআইএ