ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় তিন মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩
ফরিদপুরে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় তিন মামলা

ফরিদপুর: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাটসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়।  

এ হামলায় ঘটনায় সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সংশ্লিষ্ট থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।  

এর আগে গত শনিবার ভোর রাতে ওই এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান এমএম মিজানুর রহমান ও পরাজিত প্রার্থী খালিদ মোশররফ রঞ্জু সমর্থকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান এমএম মিজানুর রহমানের সমর্থক নির্বাচিত ইউপি সদস্য আজগর আলী পক্ষের লোকজনের সঙ্গে খালিদ মোশাররফ রঞ্জুর সমর্থক কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার লোকজনের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ভোর রাতে ইউপি সদস্য আজগর আলীর পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষ কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার পক্ষের লোকজনের অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আজগর আলীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী হামলা চালায়। ঘর ছেড়ে লোকজন দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।  

মামলার বাদী উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী কাবুল হাসানের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, শনিবার ভোর রাতে আমরা যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন বর্তমান ইউপি সদস্য আজগারের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নারকীয় তাণ্ডব চালায় তারা। বাড়িতে কোনো পুরুষ না থাকায় আমাদের জিম্মি করে দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ভাঙচুর, স্বর্ণালংকার লুটপাট, নগদ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল সেটসহ অন্তত ২৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। আজগার মেম্বারসহ অন্তত ২০ জন ও অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

অন্য মামলার বাদী মোশারফ হোসেন বলেন, হামলাকারীরা আমার বাড়ির তিনটি টিনের ঘর কুপিয়ে তছনছ করেছে, ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর, ইলেকট্রনিক পণ্য, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটপাটসহ অনন্ত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করে হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় সোমবার রাতে মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে আজগরসহ ৩০ জন ও অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।  

একই ঘটনায় মামলা করেছেন ওই গ্রামের মানিক সরদারের মেয়ে রাবেয়া বেগম।

তিনি বলেন, তাদের বাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর, স্বর্ণালংকার লুটপাটসহ মোট ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে হামলাকারীরা।  

এ নিয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য আজগর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।  

আজগর আলীর সমর্থক জাহাঙ্গীর মোল্যার স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার পক্ষের লোকজন শনিবার ভোর রাতে আগে আমাদের বাড়িতে হামলা করে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।

পাচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএম মিজনুর রহমান বলেন, আমি কখনই গোন্ডগোলের পক্ষে নেই। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক আমি সেটাই চাই।  

খালিদ মোশররফ রঞ্জু বলেন, আমার লোকজনের ওপর আজগর মেম্বারের লোকজন হামলা করে প্রায় অর্ধশত বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাটসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।  

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলার শেষ সীমানা পাচুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রাম। গত শনিবার ভোরে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।