ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘জলবায়ু ন্যায্যতার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
‘জলবায়ু ন্যায্যতার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’

ঢাকা: জলবায়ু ন্যায্যতার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে পরিবেশবাদি সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরির্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো।

তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি। বরং পরিবেশগত ঝুঁকি বৃদ্ধি কাজ করছে। তাই দরিদ্র মানুষের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদি মানববন্ধন-সমাবেশ, সাইকেল র‌্যালি ও মুভাভিনয় কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন তারা।

জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ইকুইটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ব্রতী, গ্লোবাল ল’থিংকার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশ সাইকেল লেন বস্তবায়ন পরিষদ যৌথভাবে এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ‘ব্রতী’র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুর্শিদ।

তিনি বলেন, জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলো জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণে বর্তমানে সারাবিশ্ব একটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। দায়ী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতিপূরণমূলক অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তারা সেটা করেনি। বরং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য ঋণের ফাঁদ তৈরির মতো হঠকারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জি-২০ সম্মেলনে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের মতো গরিব দেশগুলো চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। অথচ জি-২০ সম্মেলনে প্রতিবছর নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে আগ্রহ থাকে না। আর জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ী দেশগুলো তাদের দায় এড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে ঋণের ফাঁদে ফেলার কর্মসূচি গ্রহণ করে। দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও অনতিবিলম্বে উপযোগী জলবায়ু নীতি গ্রহণের জন্য জি-২০ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে পৃথিবীকে এক পরিবার বললেও সংগঠনটি বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশগুলোর স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০০৯ সালে এ সংগঠনের সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও অর্থ, বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে বের হয়ে আসার কথা থাকলেও সদস্য দেশগুলোর শিল্পাকারখানাগুলো আরও বেশি দূষণের শিকার হচ্ছে গরিব দেশগুলো। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে দুর্যোগ বাড়ছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে ফসলের উৎপাদন কমছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন ও সাগর সৈকত ধ্বংস হচ্ছে। ফলে উপকূলের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ধনী দেশগুলো একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করছে না। তাই দুর্যোগ কবলিত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।

সিপিআরডি’র রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার আল ইমরান বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর ঋণ নীতিতে মুনাফা অর্জনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তুসংস্থান ও জলবায়ুর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী গ্লোবাল নর্থের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনগুলোকে এ সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

কর্মসূচিতে জলবায়ু শরণার্থী, নদী দূষণ ও বৃক্ষ নিধন বিষয়ক মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের শিল্পীরা। এরআগে শতাধিক সাইকেলিস্টের একটি র‌্যালি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠানে পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য ও ব্যক্তিরা অংশ নেন। জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে আসিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএনডিডি) বাংলাদেশসহ এশিয়ার দশটি দেশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
টিএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।