ঢাকা: রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই প্রথমে পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এডিসি সানজিদা আফরিন।
বেসরকারি চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
শাহবাগ থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে এডিসি সানজিদা বলেন, আমার স্বামীই হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেছেন।
সানজিদা আফরিন ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে এডিসি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী।
বারডেম হাসপাতালে ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ধরে সিভিয়ার চেস্ট পেইনে ভুগছিলাম। সেদিন পেইনটা একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছিল। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। আমি হাইপার টেনশন সংক্রান্ত জটিলতায় আগে থেকেই ওষুধ নিতাম। আমি ল্যাব এইডের যে ডাক্তারকে দেখাই তিনি দেশের বাইরে থাকায় বারডেমে কাউকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেই।
যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।
স্যারকে জানালে তিনি শাহবাগ থানার ওসির মাধ্যমে একজন ডাক্তারের সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন। পরে হাসপাতাল গিয়ে জানতে পারি সেই ডাক্তার একটি কনফারেন্সে আছেন, আসতে দেরি হবে। বিষয়টি স্যারকে জানালে আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আমি আশেপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দিচ্ছি।
এরপর স্যার এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো।
এ ঘটনার সময় আমি যে রুমে ইটিটি করানো হয় সেই রুমে ছিলাম। ইটিটি করানোর ১৫-২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা হট্টগোলের শব্দ শুনি। প্রথম যে সাউন্ডটা কানে আসে যে স্যারই চিৎকার করে বলছেন ‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।
আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারও সঙ্গে ঝামেলা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড, উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।
ওই সময় স্যার নিজের সেফটির জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এত লোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন থাকে। তখন আমি শাউট করছিলাম।
সানজিদা বলেন, এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই ভিডিও কর’। এরপর ২-৩ জন ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করেন। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না ইটিটি'র পোশাকে থাকা অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক।
সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।
আপনি অসুস্থ সেটা আপনার হাজবেন্ড জানতেন কি না, জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাবো সেটা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ তিনি মিস করে গিয়েছিলেন, অথবা বিজি ছিলেন। যেহেতু ৬-৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার চেস্ট পেইন হচ্ছিল, সবসময় তো পরিস্থিতি সেরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করবো। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার পর হাজব্যান্ডের সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।
আরও পড়ুন>>>
ছাত্রলীগের ‘ভুয়া’ পরিচয়ে পুলিশে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এডিসি হারুন
ছাত্রলীগ নেতা নাঈমকে দেখতে হাসপাতালে ডিএমপি কমিশনার
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
পিএম/আরআইএস