ঢাকা: চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না। আশা করি, দাম স্থিতিশীল থাকবে।
তিনি বলেন, এক সময় আশ্বিন-কার্তিক মাসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতো। এখন আশ্বিন মাস চলছে। তারপরও চালের কোনো সংকট নেই। এমনকি পুরো পৃথিবীতে খাদ্যের মধ্যে চালের এখন যে গুরুত্ব, সে হিসেবে এ বছর আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে না। যেখানে ভারত চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব তাদের সমালোচনা করছে, তারা মনে করছে, নির্বাচনী বছর দেখে ভারত এমনটা করছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি। চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না। আশা করি, দাম স্থিতিশীল থাকবে।
বাংলাদেশের জলবায়ুতে ভুট্টার উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি। এ বছর ৬৭ লাখ টন ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর: কাজী বদরুদ্দোজার আবদান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ)।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের কৃষি বিষয়ক নিউজ করা অনেক কঠিন। যারা কৃষি জানালিস্ট ফোরামের সদস্য তারা খুব চায় কৃষির নিউজ বেশি করে হোক। কিন্তু কিছু সাব এডিটর আছে, কিছু এডিটর আছে, কিছু বোর্ড আছে; যেখানে খবর হলো ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী বলল? গত দুই বছর যাবত একই কথা বলতেছে, সেই একই নিউজ! পাশাপাশি আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব কী বলল? আর তথ্যমন্ত্রী কী বলল? এটি প্রতিদিনের নিউজ, এই একই নিউজ তারা করছে। আর সেখানে কৃষি বিষয়ক নিউজ পাওয়া অনেক কঠিন।
তিনি আরও বলেন, যারা কৃষি সাংবাদিক ফোরাম করেছেন, তারা খুব আন্তরিকতার সহিত সংবাদ পরিবেশন করেন। আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কাজী বদরুদ্দোজার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর শুরু করেছিলেন কাজী বদরুদ্দোজা। তিনি এ দেশের সনাতন কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তুলেছিলেন, যার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি। তবে এ রূপান্তরের দ্বিতীয় অংশটি এখন বড় চ্যালেঞ্জের। ধান রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত এখন যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এমন কৃষির রূপান্তরে কাজী বদরুদ্দোজা ছিলেন দূরদর্শী। তিনি ছিলেন আধুনিক কৃষির স্বপ্নদ্রষ্টা। রূপান্তরে তিনি কাজ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব বিজ্ঞানীর এ ক্ষমতা থাকে না। যেটা বদরুদ্দোজার মধ্যে ছিল।
দেশে ভুট্টার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি গবেষণা সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য কাজী বদরুদ্দোজা স্বাধীনতার পরে ভুট্টার গবেষণাগার তৈরি করেছিলেন। ভুট্টা আমাদের দেশে কোনো ফসলই ছিল না। আমরা যখন ২০০৮ সালে দায়িত্ব নেই তখন ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৬ লাখ টন। আর এ বছর ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে ৬৭ লাখ টন। কাজী বদরুদ্দেজার স্বপ্ন ছিল ভুট্টা থেকে তেল বানানো।
মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার মতো দেশে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ ভুট্টার তেল খায়। ভুট্টার তেল সে দেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আমাদের নাসির গ্লাস কোম্পানি, তারা ভুট্টা থেকে স্টার্চ করে এবং তেলও করে। বাংলাদেশে ভুট্টা উৎপাদনের জন্য ক্লাইমেটের যে কন্ডিশন, তা সবচেয়ে ভালো। ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বাংলাদেশে অনেক বেশি। এই ভুট্টার উৎপাদন আরও ব্যাপকভাবে যখন বাড়বে তখন নাসির গ্লাসের মতো অনেক উদ্যোক্তারা আসবেন এই সেক্টরে ইনভেস্ট করতে।
সেমিনারে বিএজেএফের প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল এনআরবিসি ব্যাংক, এসিআই এগ্রিবিজনেস ও দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড। দুই দিনব্যাপী জাতীয় কৃষি সম্মেলনের প্রথম দিনে জাতীয় এ সেমিনার আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও ৬০ জন কৃষি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএজেএফর সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রধান ড. আনসারী, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ