ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া প্রকল্প-বিনা রশিদে ‘অধ্যক্ষের পকেটে’ কোটি টাকা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
ভুয়া প্রকল্প-বিনা রশিদে ‘অধ্যক্ষের পকেটে’ কোটি টাকা

কক্সবাজার: পছন্দের শিক্ষকদের নামে কাগজে-কলমে অসংখ্য ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কলেজ ফান্ডের অন্তত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (সহযোগী অধ্যাপক) মুজিবুল আলম। তা ছাড়া প্রশংসা পত্র বিতরণ, প্রত্যয়ন পত্র, ভর্তি বাতিল, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়; একইরকম কয়েকটি খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে কয়েক লাখ টাকা আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ আছে, সরকারি করণের পাঁচ বছর হলেও এখন পর্যন্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে। যে কারণে চরম অসন্তোষ রয়েছে রামু সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে। অথচ, একইসঙ্গে সরকারি হওয়া টেকনাফ সরকারি কলেজ, চকরিয়া সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে সরকারি নিয়মে বেতন ও ফি নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজ ফান্ডে বেশি টাকা জমা থাকলে ভুয়া প্রকল্প দিয়ে তা আত্মসাৎ করা যাবে এমন উদ্দেশ্যে সরকারি হওয়ার পাঁচ বছর পরেও সরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে না। এ ছাড়াও অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে তার নিজের শিক্ষকসহ বয়োজ্যেষ্ঠদের নাম ধরে ডাকা; তাদের নিজ টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে কথা বলা; শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার ও রুঢ় আচরণ দেখানোর অভিযোগও রয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রামু কলেজ সরকারি হয়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর থেকে সংযুক্তিতে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মুজিবুল আলম।

শিক্ষকরা জানান, মুজিবুল আলম রামুর পূর্ব মেরংলোয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও এ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। সাবেক ছাত্র ও বর্তমান অধ্যক্ষ হওয়ায় কলেজের মানোন্নয়নে মুজিবুল ভালো প্রভাব রাখবেন বলে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীরা আশা করলেও বর্তমান পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বিপরীত।

অধ্যক্ষ হিসেবে মুজিবুল এ কলেজে যোগ দেওয়ার পর এইচএসসি, ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ে অন্তত এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাশ করেছে। তাদের কাছ থেকে বিনা রশিদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করেছেন। একইভাবে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে মোটা অংকের জরিমানার টাকা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কলেজ ফান্ডে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ভর্তি বাতিল, ট্রান্সফারসহ কয়েকটি খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

বিনা রশিদে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কলেজের অফিসের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, এ কাজগুলো এক সময় আমরা করতাম। রশিদমূলে টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতাম। কিন্তু নতুন অধ্যক্ষ স্যার যোগদানের পর বিষয়গুলো কয়েকজন কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি নিজেই তদারকি করেন।

বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর তার পছন্দের কয়েক শিক্ষকের নামে কাগজে-কলমে ৬০ থেকে ৭০টি প্রকল্প দেখিয়েছেন। দুজন শিক্ষকের নামে ১৫টি করে প্রকল্প দেখানো হয়েছে। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের অসঙ্গতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এরকম অর্ধশতাধিক প্রকল্পের নথি রয়েছে বাংলানিউজের হাতে।

রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (সহযোগী অধ্যাপক) মুজিবুল আলমএকটি নথিতে দেখা গেছে, গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনে খাবারের আয়োজন করা হয়। এদিন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ৫০ শিক্ষক ও অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের খাসির মাংস, ডিম, ডাল, সাদা ভাত ও দই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় নাস্তার প্যাকেট। অনুষ্ঠানের জন্য একটি ব্যানারও ছাপানো হয়। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া। সদস্য ছিলেন কলেজের আরও ৬ শিক্ষক।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ভাষ্য, অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৪০-৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে খরচ দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

একইভাবে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করে খরচ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আহ্বায়কও ছিলেন সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া।

প্রকল্পে মাটি ভরাটের নামে ২ লাখ, সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ৫০ হাজার, প্রকাশনা ২৯ হাজার ৫০০, লেবার ও অন্যান্য ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়। ১৩টি খাতে মোট খরচ দেখানো হয় ৬ লাখ টাকা, যা প্রকৃত খবচের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকল্পের আওতায় বাস্তবে মাটি ফেলা হয়েছে ৩৮ পিকআপ। প্রতি পিকআপ ৮৫০ টাকা করে ধরা হয়। লেবারসহ এ খাতে সবোর্চ্চ ৪০-৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকার।

একটি দেয়ালিকা করে ২৯ হাজার ৫০০ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে রামু সরকারি কলেজে। দুই পেয়ার সাউন্ড সিস্টেমের খরচ প্রদর্শন করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকার।

এ বিষয়ে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে থাকা রাজিব বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনি এ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। অন্যান্য কি খরচ হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না।

শিক্ষকদের পার্কিং শেড রঙ করা, পার্কিং শেড-গ্রিল স্থাপন ও কলেজের বিভিন্ন কক্ষে রঙ করাসহ পৃথক ৫টি প্রকল্প; চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পোশাক তৈরি, চারা রোপণসহ অন্তত ১৫টি প্রকল্প দেখানো হয়েছে সুপ্রতিম বড়ুয়ার নামে। এসবের বেশির ভাগই ভুয়া বলে দাবি করছেন বিভিন্ন শিক্ষক।

এসব ব্যাপারে সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া বলেন, আমি প্রকল্পের আহ্বায়ক এটি সত্য। কিন্তু আমার বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ করেছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোসাইন। আমি শুধু চেক ও ভাউচারে সই করেছি। আমি জানি এভাবে না দেখে সই করাটা উচিত হয়নি। তবু অধ্যক্ষ যেহেতু আমার ছাত্র তাই না করে পারিনি।

একইভাবে ২০২২ সালের অক্টোবরে আয়োজিত দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের নামেও বড় ধরনের অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে। এ অনুষ্ঠানে কলেজ ফান্ড থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫০ টাকা খরচ দেখানো হয়। অথচ প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যয় ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ অনুষ্ঠানের বাস্তব খরচ ছিল আড়াই লাখ থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের আহ্বায়ক ও ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, আমাকে কাগজে কলমে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমার নামে চেক ইস্যু ও সই নেওয়ার পর একটা টাকাও আমি চোখে দেখিনি। অধ্যক্ষ নিজেই সব খরচ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পরে বিল ভাউচারে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখার পর দুইবার সই না করে ফিরিয়ে দিই। এরপর অধ্যক্ষ অনুরোধ করায় সই করি।

কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছলিম উল্লাহর নামে রয়েছে ১৫টি প্রকল্প। এর মধ্যে শুধুমাত্র ক্রোকারিজ ক্রয়ের প্রকল্প আছে চারটি। এতে অর্থ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার। পৃথক আরও ৭টি প্রকল্পের আওতায় ২৪টি ফ্যান; অধ্যক্ষের কক্ষে এসি সংযোগ; ফ্রিজ, সোফা, কার্পেট কেনাসহ নানা প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকার বেশি।

ছলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনি নিজে কয়েকটি ফ্যান ও ক্রোকারিজ কিনেছিলেন। এসি-ফ্রিজসহ অনেকগুলো বড় মাপের কেনাকাটা অধ্যক্ষ নিজেই করে আমার কাছ থেকে ভাউচারে সই করেছেন। বেশিরভাগ প্রকল্পের টাকা আমি চোখে দেখিনি। ভবিষ্যতে আমার নামে প্রকল্প না দেওয়া ও ক্রয় কমিটি থেকে বাদ দিতে আমি তাকে অনুরোধ করেছি।

বিভিন্ন শিক্ষকের নামে প্রকল্প তৈরি করলেও অধ্যক্ষের নির্দেশে অধিকাংশের কাজ বাস্তবায়ন করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত। অভিযোগ আছে, মোহাম্মদ হোসাইন প্রকল্পের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অধ্যক্ষকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেন। প্রকল্পের আহ্বায়কসহ সংশ্লিষ্টরা অধ্যক্ষ ও হোসাইনের তৈরি ভুয়া বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করেন মাত্র।

রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রধীর রঞ্জনসহ বিভিন্ন শিক্ষকের নামে দেওয়া প্রকল্পের মধ্যে কলেজের ১ ও ২ নম্বর কক্ষের টিন লাগানো ও চাল মেরামত প্রকল্পসহ অন্তত ২০টি প্রকল্পের কাজ একাই করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোসাইন। শিক্ষকদের পার্কিং, শেড তৈরি, ফ্ল্যাশ লাইট কেনা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) স্টাফদের আবাসন সংস্কারসহ তার নিজ নামেও রয়েছে অনেক প্রকল্প। এসবেও রয়েছে বিশাল অনিয়ম।

টিন লাগানো ও চাল মেরামত প্রকল্পে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকাও খরচ না করে মোহাম্মদ হোসাইন বিল করেন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকার। পার্কিং, শেড তৈরিতে ২০ হাজারের বেশি খরচ না করেও তিনি ৮২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন। মোট কথা, তিনি যে কয়টি প্রকল্প দেখেন, সবগুলোতেই বড় বড় অনিয়ম রয়েছে।

অধ্যক্ষের খরচের এখতিয়ারের বাইরে বড় প্রকল্পগুলোয় দরপত্র আহ্বান করে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার নিয়ম থাকলে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (সহযোগি অধ্যাপক) মুজিবুল আলমের একটি প্রকল্পেও নিয়ম মানা হয়নি। বরং মুজিবুল আলমের প্রকল্পে ভুয়া কোটেশন দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন প্রভাষক মোহাম্মদ হোসাইন।

এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোহাম্মদ হোসাইন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে যে অর্থ দিয়েছেন, তার মধ্য থেকেই খরচ করেছি। বাকি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অন্য প্রকল্পে অর্থ খরচ করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। বাকি বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে বসে কথা বলতে এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন হোসাইন।

অন্যজনের প্রকল্পে নিজে কাজ করার বিষয়ে তার দাবি, আহ্বায়কের অনুরোধে তিনি কাজগুলো করে দিয়েছেন।

কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল হক জানিয়েছেন, তিনি ২০২২ সালের ১৮ জুন সহকারী অধ্যাপক সাহাবউদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এ সময় কলেজ ফান্ডে সর্বসাকুল্যে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা ছিল।

বিষয়টি নিয়ে সাহাবউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দুই মাস দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় শিক্ষকদের বেতন, বোর্ড ফি আর কিছু বেঞ্চ মেরামত করেছি। সর্বসাকুল্যে ৬-৭ লাখ টাকা হতে পারে। এ সময়ের আয়ও খরচের সমপরিমাণ হবে।

আরেক শিক্ষক জানান,  বর্তমানে কলেজ ফান্ডে ৫০ লাখ টাকার কম স্থিতি আছে। ফান্ডের মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের জন্য ভুয়া প্রকল্প তৈরি করেছেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি।

কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার জাহান বলেন, বিনা রশিদে প্রশংসা পত্র, প্রত্যয়ন পত্র, ফি আদায়, ভুয়া প্রকল্প দিয়ে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের বিষয়গুলো কলেজে ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে চান না।

সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এসব তুলে ধরে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন আকতার জাহান।

সরকারি কলেজে শিক্ষক পরিষদ থাকা ও পরিষদের মতামতের ভিত্তিতে কাজ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। অধ্যক্ষ মুজিবুল নিজের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতাকে লাগামহীন করার জন্য শিক্ষক পরিষদ গঠন ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আরেক শিক্ষক।

কলেজের নানা বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহম্মদ। তিনি বলেন, ঘটনাগুলো শুনে আমি বিস্মিত। কলেজটিতে আর্থিক অনিয়ম ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্রুত নাগাল টেনে ধরা না হলে কলেজটি ধ্বংস হয়ে যাবে। রামুর সচেতন মহলকে নিয়ে কি করা যায় আমরা তা ভাবছি।

সামগ্রিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম বলেন, আগামীকাল রোববার (৮ অক্টোবর) সরকারি নিয়মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়ের ঘোষণা আসবে। তা ছাড়া সকল প্রকল্পেই আহ্বায়ক আছেন, একাধিক সদস্য আছেন। তারা টাকা খরচ করেন। বিল ভাউচার স্বাক্ষর করে আমাকে জমা দিলে আমি অনুমোদন করি।

ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখা; আহ্বায়কদের নামে চেক ইস্যু করে সে টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজ হেফাজতে রেখে অনিয়ম ও খরচের বিষয়গুলো অস্বীকার করেছেন তিনি। দিতে পারেননি বিনা রশিদে প্রশংসা পত্র, প্রত্যয়ন পত্র বিতরণসহ কয়েকটি খাতের টাকা কলেজ ফান্ডে জমা না করার বিষয়ে কোনো সদুত্তর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
এসবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।