ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ: সিটিটিসি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ: সিটিটিসি  সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান

ঢাকা: বাংলাদেশ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন,  দেশের জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরোপুরি সক্ষম হয়েছি আমরা। কারণ গত ৩ বছরে বাংলাদেশে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক্স অ্যান্ড পিসের  (আইইপি) গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সের (জিটিআই) রিপোর্টে বাংলাদেশ প্রতিবছর জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করছে। এ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ৪৩ তম। এর আগে ২০১৬ সালে আমাদের অবস্থান ছিল ২২তম। গত ৭ বছরে আমাদের অবস্থান ৪৩তম অবস্থানে উন্নীত  হয়েছে।  

রোববার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র‍্যাব) আয়োজিত 'উগ্রবাদ প্রতিরোধে সাংবাদিকদের ভূমিকা' শীর্ষক ওয়ার্কশপে এসব কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে সন্ত্রাস দমনে যারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, যারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, বাংলাদেশের উগ্রবাদ পরিস্থিতি নিয়ে যারা শঙ্কায় থাকে, তাদের দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। জিটিআই প্রতিবেদনের ভাষায় বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার মতো ভয়াবহ একটি জঙ্গি সংগঠন যে প্রস্তুতি নিয়ে তারা রি-অর্গানাইজড করার চেষ্টা করেছিল, তাদের সে প্রস্তুতি আমরা বিনষ্ট করে দিয়েছি। শারকিয়ার আদলে ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একটি জঙ্গি সংগঠন দেশের পাহারি এলাকা প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছিল। জমি ক্রয় করে তারা আস্তানা তৈরি করেছিল। সেই আস্তানা খুঁজে বের করে আমরা তা গুড়িয়ে দিয়েছি। আজকেও আনসার আল ইসলাম সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের দুইজন নেতাকে আমরা গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি।  

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে নতুন বিষয় নয়। বাংলাদোশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আবগান ফেরত মুজাহিদদের মাধ্যমে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তখন জঙ্গিবাদের শ্লো-গান ছিল " আমরা হবো তালেবান বাংলাদেশ হবে আবগান"। সেই সময় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের যাত্রা শুরু হয়ে পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল বিভিন্ন সংগঠন।  

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন দেশের উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ যেমন আমাদের দেশকে প্রভাবিত করে, বৈশ্বিক জঙ্গি হামলা যেমন আমাদের দেশকে প্রভাবিত করে, তেমন বাংলাদেশের কোনো ঘটনাও সারাবিশ্বের কাছে আলোচিত হয়ে দাঁড়ায়।  

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলার কারণে বাংলাদেশ যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিল, এবং হোলি আর্টিজান হামলার প্রেক্ষিতে বিশ্ববাসির কাছে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার যে অপপ্রচার করার পায়তারা শুরু হয়েছিল, তা আমাদের সাংবাদিক ভাইদের লেখনীর কারণে হতে পারেনি। অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে এবং সিটিসিটি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের দমনে এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এজন্য আমি আপনাদের (সাংবাদিক) অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই৷ 

তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমন ওয়ান ইলেভেন এর আগে টুইন টাওয়ারের হামলার আগ পর্যন্ত হার্ড অ্যাপ্রচ (অপারেশনাল প্রক্রিয়ায়) জঙ্গিবাদ দমনের একমাত্র পন্থায় হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু টুইন টাওয়ারের হামলার পর সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা বিশ্বনেত্রীবৃন্দ আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত পৌঁছালেন। যে অপারেশনাল প্রক্রিয়ায় জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ দমন করা সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার একটি সমন্বিত কর্ম পন্থা। ২০০৬ সালের জাতিসংঘ যে কাউন্টার টেরোরিজম স্ট্র্যাটেজি প্রস্তুত করেছে, সেখানে এক নম্বর শর্ত ছিল সন্ত্রাসবাদ দমনের সহায়ক পরিবেশ প্রতিরোধ করা। যদি সন্ত্রাসবাদের উত্থান, উপাদান গুলো যদি আমরা নির্মূল করতে পারি, তাহলে এ সমাজ থেকে সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব। সেটা আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে সিটিটিসির কার্যক্রমের মাধ্যমে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সফট এপ্রোচ এর মাধ্যমে সারাদেশব্যাপী জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছি, যাতে করে পুনরায় কেউ জঙ্গিবাদের রেডিক্যালাইজড না হয়।  

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার অনেক কারণ আছে উল্লেখ করেন সিটিটিসি প্রধান বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, সামাজিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক কারণ, পারিবারিক প্রভাব কাজ করে একটা মানুষকে সন্ত্রাসবাদ বা উগ্রবাদ উদ্বুদ্ধ করতে। এই কারণগুলো নিয়ে যদি আমরা প্রতিটা মানুষের, প্রতিটা অভিভাবক, প্রতিটা শিক্ষকের কাছে পৌঁছতে পারি, তারা যদি বুঝতে পারেন কী রকম লক্ষণ দেখা দিলে তার ছেলে/ছাত্র জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কি না? বা রেডিক্যালাইজড হচ্ছে কি না। তবে আমরা জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ হওয়া থেকে সবাইকে বিরত রাখতে পারবো।  

তিনি বলেন, ইউনিয়ন গুলোর মেম্বার-কাউন্সিলরদের অন্তর্ভুক্ত করে আমরা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এছাড়াও প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ পর্যন্ত দেশের ৫৬টি জেলায় কার্যক্রম করেছে। এ বছর আমরা আশা করছি দেশের ৬৪টি জেলায় কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারব। আমাদের এ প্রজেক্টের মাধ্যমে অনেক সুফল পেয়েছি। তার স্বীকৃতিও পেয়েছি আমরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।