সিলেট: সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলারবন রাতারগুল থেকে পাঁচ বস্তারও বেশি মানবসৃষ্ট অপচনশীল বর্জ্য প্লাসিক-পলিথিন, চিপস-বিস্কুটের প্যাকেট ও কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (৯ অক্টোবর) বিকেলে রাতারগুল গ্রামের তরুণদের সংগঠন রাতারগুল সমাজ কল্যাণ পরিষদ বনের ভেতরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে।
পরে এক অনুষ্ঠানে তরুণরা বনটি সুরক্ষায় নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টার প্রতিশ্রুতির কথা জানায় এবং এ বনে আগমণকারী সবাইকে বনের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানায়।
এর আগে তারা পরিবেশ বিনষ্টকারী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান সূচক ‘দয়া করে ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন-প্লাস্টিক পানিতে ফেলবেন না’ লেখা স্টিকার পর্যটকবাহী নৌকাগুলোতে লাগিয়ে দেয়।
রাতারগুল গ্রামের তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত এ সংগঠনের সদস্যরা আরও জানায়, সপ্তাহে প্রতি বুধবার তাদের তিনজন করে সদস্য বনের মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী পদার্থ খুঁজতে বের হবে এবং ভেতরের অবস্থা তদারকি করবে।
দুপুর ১টা থেকে শুরু হওয়া পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষ হয় বিকেল ৩টায়। পরে রাতারগুল ছাউনিতে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা তরুণদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘প্রায় একযুগ আগে রাতারগুল যে অবস্থায় ছিল, এখন সে অবস্থায় নেই। এতদিন ধরে নিয়মিত পর্যটকদের আগমণে রাতারগুল বন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ বছর আগের শিশুরা আজ বড় হয়েছে। তারা বনটি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে; যা অত্যন্ত আশার বিষয়। ’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘রাতারগুল একটি বিশেষ ধরনের বন। আমরা প্রথম থেকে বনটি সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বনের ভেতরে কিছু কার্যক্রম একেবারেই অন্যায্য। কিছু পর্যটক বনের মধ্যে উচ্চস্বরে গান-বাজনা করেন, অনেকে অবিবেচকের মতো প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেট ফেলে দেন; যেগুলো এ বনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ’
তিনি বলেন, ‘আশার দিক হলো- দিন দিন প্লাস্টিক-পলিথিন ফেলার প্রবণতা কমছে। কারণ এ অঞ্চলের নাগরিকরা সচেতন হয়েছেন, রাতারগুলের নৌকার মাঝিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই পর্যটকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন। বনকে রক্ষার তাড়না থেকে স্থানীয় তরুণরা এখন একত্রিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এখন কেউ এ বনকে ধ্বংস করতে চাইলেও তা পারবে না। ’
ভূমিসন্তান বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, ‘রাতারগুলে এসে এক ধরনের নবজাগরণ দেখেছি। মানবসৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কারে এ গ্রামের তরুণদের কর্মযজ্ঞ সত্যি ভালো লাগার মতো। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একসময় এ বনটি রক্ষায় অনেক আন্দোলন করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল-একদিন এ বন সুরক্ষায় রাতারগুল গ্রাম ও আশপাশ গ্রামের মানুষের জাগরণ ঘটবে। আজ সে জাগরণ ঘটেছে বলে মনে করি। তারা জাগ্রত হলেই এ বন সুরক্ষা করবে এবং আশপাশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাবে। ’
রাতারগুল সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আল আমিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ছয়ফুল আলমের পরিচালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আনিস মাহমুদ, শুয়াইবুল ইসলাম, রাতারগুল সমাজকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা গিয়াস উদ্দিন, মিনহাজ উদ্দিন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, আমির আলী, আরব আলী, সুনা মিয়া, হারিছ মিয়া, মিনহাজ উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, আজির উদ্দিন, সৈয়দ ফজলু মিয়া, বিলাল, রাসেল সিদ্দিকী, ফারুক আহমদ, সংগঠনের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে দুলু মিয়া, লুকমান আহমদ,ময়নুল আহমদ,শাকিল আহমদ,কামরুল ইসলাম,পারভেজ আলম, শিপল,তুহিন,আয়নাল, মুস্তাকিম, সাইফুর রহমান,নাছিম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৩
এনইউ/এএটি