ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় ভাঙল সাধুর মিলনমেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৩
কুষ্টিয়ায় ভাঙল সাধুর মিলনমেলা

কুষ্টিয়া: বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান স্মরণোৎসবের শেষদিনে সাধুর সঙ্গ সাঙ্গ করে আপন ঠিকানায় ফিরেছেন দূর-দূরান্ত থেকে ছেউড়িয়ার তীর্থধামে আসা বাউল, সাধু-ভক্ত, অনুসারীরা।

আগত ভক্ত অনুসারীরা বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজস্ব ঘরানার আচার অনুষ্ঠান শেষ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকেই তিনদিনের সাধুসঙ্গের ইতি টানতে সঙ্গে আনা গাট্টি, বোচকা গুছিয়ে শেষবারের মতো ভক্তদের সঙ্গে ভক্তি-কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে অশ্রুভরা চোখে বিদায় নিয়ে বাউলরা আখড়াবাড়ি ছেড়ে রওনা হয়েছেন নিজ নিজ আশ্রমের উদ্দেশে। তারা বলছেন এই মহামিলনের শিক্ষা মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশ থেকে দেশান্তরে।

আখড়াবাড়িতে অনুষ্ঠিত তিরোধান দিবসের তিনদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উৎসবকে কেন্দ্র করে জমজমাট আখড়াবাড়ি আবার বছর জুড়ে রয়ে যাবে আপন রূপে। তাদের গুরু বাণী ও সবকিছুর মূলে পরম মমতায় শ্রদ্ধাভরে গুরুকে বারবার প্রণাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। তাদের আবার দেখা হবে লালনের দোল অনুষ্ঠানে।
বাউল ফকির আর সাধুদের ছাড়াই নামেমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা সভা ও লালন সংগীত পরিবেশিত হবে রাতভর।

বিদায় বেলায় সাধুরা বলছেন, সাধুদের সবকিছুর মূলে গুরু ভক্তি। গুরুকে ভজেই সর্বদা তারা পরমাত্মার সন্ধান করে ফেরেন। ভক্তি জানিয়ে শিষ্যরা বিদায় নিলেও আবারও তারা ঘুরে ঘুরে আসেন গুরুর এই তীর্থধামে। তাদের যে গুরুর চরণ স্পর্শ করা বড়ই দরকার। নইলে সে তো পাবে না আর দ্বিন-দরিয়ার পাড়।

রহমত আলী ফকির বলেন, সমাজের অসংগতি, সাম্প্রদায়িকতা, মানুষে মানুষে অযথা হানাহানি দূর করে চিরন্তন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন লালন। সাঁইজি তার পদাবলি ও বাণীতে মানুষকে প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এই উৎসব কেবল উৎসব নয় এখান থেকে লালনের এমন শিক্ষা ও মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশব্যাপী।

লালন অনুসারী হৃদয় শাহ জানালেন, সারা বছরের বহুল প্রতীক্ষিত এই মহামিলনে ঘটে যাওয়া সাধু সঙ্গ প্রতিটা ভক্ত অনুসারীদের মধ্যে উৎসারিত। তারা এই সঙ্গকে আত্মধারণ করে ফিরে যাবেন আপন আলোয়। যখন জ্ঞান সাধনার আত্মতৃষ্ণা ক্রমে বৃদ্ধি পায়। সেকারণে সাঁইজির ভাবাদর্শে একে অন্যের সান্নিধ্যে এসে গানে গানে প্রবেশ করেন মায়ার জগতে।

তিন দিনের এই আয়োজনে এবার উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁয় ছিল না। তবে এসময় খেলাফতধারী সাধুদের চোখে পড়েনি খুব একটা। ঘুরে ফিরে স্থানীয় বাউলদেরই চোখে পড়ে। খেলাফতধারী বুধবারই চলে গেছেন নিজ আশ্রমে। তবে খেলাফতধারী সাধু না থাকলেও থেমে নেই অনুষ্ঠান।

এদিকে দিনের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ দর্শনার্থী হয় রাতে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত অবধি চলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। আর যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লালন আখড়াবাড়ির পুরো এলাকা জুড়েই কঠোর নিরাপত্তায় রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে লালন উন্মুক্ত মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেলার সমাপ্তি হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।