ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নওগাঁয় অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা প্রকল্পের যন্ত্রাংশ 

তৌহিদ ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
নওগাঁয় অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা প্রকল্পের যন্ত্রাংশ 

নওগাঁ: নওগাঁ পৌরবাসীর বিশুদ্ধ পানির কষ্ট অনেকদিনের। সংকট সমাধানে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়।

কিন্তু শহরের বয়েজহোম পাড়ায় নির্মিত প্ল্যান্টটি এখনও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই প্ল্যান্টে যুক্ত মূল্যবান যন্ত্রাংশ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায় উপরের অংশে জমে থাকা পানিতে মৃত মুরগি ও পরিত্যক্ত ওয়ানটাইম প্লেট পড়ে আছে। ভেতরের বিভিন্ন অংশে শ্যাওলা ধরেছে। আবার কোথাও জন্ম নিয়েছে কচুরিপানা।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, পানি শোধনের জন্য এটি একটি অত্যাধুনিক প্রকল্প। যেটি দেশের মাত্র ৩৭টি জেলায় প্রথম পর্যায়ে চালু করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পানি পরিশোধন করা হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পানিতে থাকা আয়রন ও আর্সেনিকের পরিমাণ জানা যাবে। জানা যাবে কত লিটার পানি সরবরাহ হয়েছে আর কত লিটার জমা আছে।

পৌরবাসী বলছে, নওগাঁ পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব। দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস পাচ্ছেন তারা। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন হয় না।

নওগাঁ শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা রাহি বলেন, প্রতিদিন সকাল হলেই সাপ্লাই পানির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পানিতে আয়রনের পরিমাণ এত বেশি যে পানির রং গাঢ় লাল হয়ে থাকে।  

তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় প্রতিনিয়তই পানির বিল পরিশোধ করলেও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা একেবারেই পাচ্ছেন না তারা। এ নিয়ে পৌরসভায় বার বার জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

একই এলাকার বাসিন্দা জাসিয়া নাসরিন জানান, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি একদমই নোংরা। খাবার তো দূরের কথা রান্না কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করারও উপযোগী নয় এই পানি। শিশুদের জন্য এই পানি আরও ভয়ংকর।

শহরের গোরস্থান পাড়ার মাসুদ নামে একজন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে; কিন্তু কি কারণে এখনও চালু করা যাচ্ছে না, প্রকল্পের টাকা কেউ পকেটে ভরেছে কিনা তাও ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।

গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে। যেখানে সরকারের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে ছোট পরিসরে তার কার্যকারিতাও যাচাই করা হয়।

এ বিষয়ে নওগাঁ জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রাক্কলনিক এমরান হোসেন বলেন, অনেক আগেই পৌর কর্তৃপক্ষকে ওই প্ল্যান্টটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেনো এখনও চালু করতে পারেননি তা বোধগম্য নয়। এটি এভাবে দিনের পর দিন পড়ে থাকলে মূল্যবান যন্ত্রাংশগুলো কার্যক্ষমতা হারাবে। কিছু কিছু যন্ত্র আছে যেগুলো নষ্টও হয়ে যেতে পারে। তাই কোনো সীমাবদ্ধতা থাকলে তা সমাধান করে প্রকল্পটি চালু করার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

নওগাঁ পৌর মেয়র নজমুল হক সনির সঙ্গে এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়। তিনি জানান, নওগাঁ পৌর এলাকায় যে-সব পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয় সেগুলো সবই পুরাতন। কিছু কিছু পাইপ নষ্টও হয়ে গেছে। সুতরাং এসব পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এই প্রকল্প চালু করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রকল্পের শুরুতেই কেনো এসব পুরাতন পাইপের বিষয়টি সামনে আনেননি জানতে চাইলে এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি পৌর মেয়র নজমুল হক সনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।