বরিশাল: বরিশালে বিভিন্ন জায়গায় আমন ধানের ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে দিনদিন পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।
যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, যেখানে ফসল আছে, সেখানে পোকার আক্রমন হবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। চিন্তিত না হয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পোকা দমনে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বরিশাল জেলায় এ বছর ১ লাখ ২৫ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষেতে রয়েছে বিআর ২২, ২৩, ৫২ ও ১১ ধান ও স্থানীয় মোটা আমন। সম্প্রতি অতি বৃষ্টির পর পাতা মোড়ানো পোকা (বডা পোকায়) আক্রমন করে এ সব ধানের ক্ষেত। ধানে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণে ব্যাপক হারে ক্ষতি হয়। এই পোকা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। পোকা এক পাতা হতে অন্য পাতায় যায়। একটি পোকা ১-৩টি পাতায় আক্রমণ করতে পারে। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। থোড় অবস্থায় আক্রমণে চিটা হয় এবং ফলন কমে যায়। লার্ভা পোকাটি ৩০-৩৫ মিলি লম্বা, হালকা সবুজ রঙের হয় ও মাথায় কালো রঙের দাগ থাকে। পিউপাটি ঘন বাদামি রঙের হয়ে থাকে। বড়ো পোকাটি হালকা হলুদ থেকে হালকা বাদামী রঙের হয় এবং মাথায় কালো বাদামি রঙের ছোট দাগ লক্ষ্য করা যায়। দুটি ডানার ওপরে আড়াআড়িভাবে কালো রেখা দেখা যায়। একটি পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা ২০০-৩০০টি ডিম দিতে সক্ষম, ডিমগুলো পাতার নীচের দিকে দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৩-৬ দিন সময় লাগে। লার্ভা কাল ১৫-২৫ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়। পিউপাগুলো পাতার ওপর কিংবা কোঁকড়ানো পাতার ভেতরে অবস্থান করে। পিউপার জীবন চক্র ৬-১২ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক পোকাগুলো আবার এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। পোকার জীবন চক্রটি ২৫-৫৫ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়।
বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়ন ভুতুর দিয়া গ্রামের কৃষক মিরাজ শরীফ জানান, ‘আমি এ বছর ১১ জৈষ্ঠ (২২০ শতাংশ) জমিতে ধানের চাষা করেছি। কিন্তু আমার ধান গাছে বডা পোকা আক্রমণ করেছে। ইতোমধ্যে এই পোকা থেকে বাঁচতে ৭/৮ হাজার টাকার কিটনাশক স্প্রে করেছি। আমার এই জমিতে ১২০ মন ধান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পোকার কারণে এখন ৭০ মন ধানও পাবো কিনা সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, এই ইউনিয়নটিতে নদী পার হয়ে আসতে হয়। যার কারণে এখানে কৃষি অফিস থেকে কৃষিবিদরা আসে না।
চাদপাশা ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক ও কৃষক মনিরুল ইসলাম, বাবুল মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। কিছুটা পোকা দমন হলেও ক্ষতি কমবে না বলে জানান তারা। এই পোকা ধান গাছের পাতা খেয়ে বিবর্ণ করে ফেলছে। কৃষি অফিস থেকেও পরামর্শ পাচ্ছেন তারা। সেই অনুযায়ী আলোর ফাদঁসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা সিদ্দিকা তানিয়া বলেন, কিছু কিছু আমন ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকা রোগ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমরা মাঠে কাজ করছি। তবে যে পোকা আক্রমণ করেছে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা আলোক ফাদঁ উৎসব করে পোকা দমন করে থাকি। সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টির পর এই পোকা আক্রমন করেছিল। তবে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো: রেজাউল হাসান জানান, ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে পোকা আক্রমণ করবেই। তাই বলে ফসল নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। পোকা দমনে কাজ করতে হবে। আমরা পোকা দমনে কি কি করতে হবে তার পরার্মশ দিয়ে থাকি কৃষকদের। পোকার আক্রমণের পর ক্ষেতে ডাল স্থাপন করা হয়। আলোর ফাঁদ দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বরিশালের প্রতিটি ব্লকে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ২০ হাজার হেক্টরে পোকা আক্রমন করেছে। ইতোমধ্যে ১৮ হেক্টর জমির পোকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এমএস/নিউজ ডেস্ক