ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের শিকদার বাড়ি পূজা মণ্ডপে মা দুর্গাকে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দেশের সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজার আয়োজন। ৫০১ প্রতিমা নিয়ে বৃহত্তম দুর্গাপূজার আয়োজনকে ঘিরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন দেশি-বিদেশি ভক্ত দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

আয়োজকদের দাবি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ আয়োজন ছিল বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা মণ্ডপ।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে দশমী পূজার মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুর্গাপূজা।  

এসময় উপস্থিত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মায়ের বিদায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকে। হাকিমপুর শিকদার বাড়ি মণ্ডপে তৈরি ৫০১ প্রতিমা নিয়ে পার্শ্ববর্তী মরা ভোলা নদীতে ফেলা (বিসর্জন) দেওয়া শুরু হয়। রাত পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন প্রক্রিয়া।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে ৬ষ্ঠী পূজার মাধ্যমে সনাতন ধর্মালম্বীদের মিলন মেলা শুরু হয় শিকদার বাড়িতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে শিকদার বাড়িতে। নানা শ্রেণি পেশা ও ধর্মের মানুষের আগমনে মুখরিত হয় শিকদার বাড়ি মন্দির। শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও ভক্ত দর্শনার্থীরা এসেছিলেন শিকদার বাড়ি মন্দিরে।

শিকদার বাড়ির এই চোখ ধাঁধানো আয়োজন দেখতে, এবার খুলনায় নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ইন্দ্রোজিৎ সাগর, প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন, পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নিহার রঞ্জন সাহা, চিত্র নায়ক রিয়াজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শিকদার বাড়ির দুর্গা মণ্ডপ দেখতে আসেন। আয়োজকদের দাবি পূজার পাঁচ দিনে কয়েক লাখ ভক্ত ও দর্শনার্থী এসেছেন শিকদার বাড়িতে।  

ভারত থেকে শিকদার বাড়ি মন্দিরে আসা প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, ইন্ডিয়া থেকে যখন বাংলাদেশে এসেছি, তখন পরিচিত অনেকেই বলেছেন শিকদার বাড়ির পূজা দেখে আসবেন। ভারতের চেয়ে বৈচিত্রের দিক থেকে শিকদার বাড়ির এই আয়োজন ব্যতিক্রম। এখানের আয়োজন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ব্যতিক্রম এই পূজার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এই সাংবাদিক নেতা।

অন্যদিকে, শিকদার বাড়ির এই দুর্গাপূজাকে ঘিরে এলাকায় স্থানীয়রাও ব্যাপক উৎফুল্ল ছিলেন। মন্দিরের আশপাশে সড়কের দুইপাশে বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছিলেন অর্ধশতাধিক দোকানি। ভক্ত-দর্শনার্থীরাও নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার, খেলনা ও প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করেছেন।

খুলনার ডুমুরিয়া থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা ননি গোপাল দাস বলেন, পূজা শুরুর পর থেকে অনেক মন্দিরে ঘুরেছি। এতবেশি প্রতিমা কোথাও দেখিনি। অনেক ভালো লেগেছে। দুই ছেলে ও স্ত্রী দীপা খুব খুশি হয়েছে।

মৌসুমি দেবনাথ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, দুর্গাপূজা মানেই শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপ। শিকদার বাড়ি পূজা মণ্ডপে না আসলে মনে হয় অপূর্ণতা রয়ে গেছে।

এছাড়া করোনা মহামারিতে তিন বছরের সীমিত আয়োজনের পরে এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে বড় আয়োজন করায় বাগেরহাটসহ আশপাশের সনাতন ধর্মালম্বীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু শিকদার বাড়ি পূজা মণ্ডপ। এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল এই মণ্ডপে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলী যুগের পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে তৈরি প্রতিমাগুলো ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জীবিত।  

এর মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রতিমা ও মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ ছিল ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণ। এছাড়া মহাভারতের উল্লিখিত বিভিন্ন উপাখ্যানের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল প্রতিমার মাধ্যমে। এর পাশাপাশি আয়োজক লিটন শিকদারের বাড়ি, মন্দিরের মূল ফটক ও আশপাশ এলাকা সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। চোখ ধাঁধানো এই আয়োজনে অর্ধশতাধিক ডেকোরেটর শ্রমিক কাজ করেছেন তিন মাসের বেশি সময় ধরে। ৫০১ প্রতিমা তৈরিতে ১৫ জন প্রতিমা শিল্পী কাজ করেছে পাঁচ মাস। সব কিছু মিলিয়ে শিকদার বাড়ির এই আয়োজনকে প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম আয়োজন দাবি করছেন আয়োজক ও স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, পূজামণ্ডপ ও ভক্ত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যরা কাজ করছে। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। রয়েছে আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল।

শিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার আয়োজক লিটন শিকদার বলেন, মূলত সনাতন ধর্মকে মানুষকে জানাতে আমরা ব্যতিক্রমী আয়োজন করে থাকি। এই আয়োজন এখন আর আমার পারিবারিক আয়োজন নেই। এটা একটি সামাজিক উৎসবে পরিণতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি ভক্ত দর্শনার্থীদের মন জয় করার।

তিনি আরও বলেন, মা দুর্গাকে বিসর্জনের মাধ্যমে আমাদের এবারের উৎসব শেষ হল। আসছে বছর আবারও বড় আয়োজন করব আমরা।

জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রথমবারের মত ১৫১টি প্রতিমা নিয়ে ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজার আয়োজন করেন বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক দুলাল শিকদার। পরের বছর ২০১১ সালে ২৫১ প্রতিমা নিয়ে আয়োজন করা হয় দুর্গাপূজার এরপর থেকে প্রতি বছরই বাড়তে থাকে প্রতিমার সংখ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬৫১টি। পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে ২০২০, ২১ ও ২২ সালে সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন করে দুলাল শিকদারের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার। করোনা মহামারির পরে আবারও সাড়ম্বরে ৫০১ প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন লিটন শিকদার।

এবছর বাগেরহাটের ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় ৬৪২টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার ৬ষ্ঠি পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের এই মহোৎসবের মূল আয়োজন শুরু হয়। নানা আচার অনুষ্ঠান ও পূজার পরে মঙ্গলবার দশমী পূজা ও দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের শেষ হয়েছে। জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে সিঁদুর খেলায় মাতেন নারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।