ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত ও তাদের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের ডাকা অবরোধের তৃতীয় ও শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালেও রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রী মিলছে না। ফলে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছাড়ছে না।
বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার পরিবহনের অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ। দুয়েকটা কাউন্টার খুললেও যাত্রীর আনাঘোনা নেই। কাউন্টার ম্যানেজার ও কর্মচারীদের অলস বসে খোশগল্প করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ দিনের খাতা-কলমের কাজটি সেরে রাখছেন। বাসগুলো লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে টার্মিনালে। দুয়েকজন যাত্রী এলেও সকালে কোনো গাড়ি যাবে না বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব যাত্রী আন্তঃজেলার গাড়ি না পেয়ে লোকাল পরিবহনে ফিরছেন গন্তব্যে।
যদিও গাবতলীতে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়িগুলোকে সতর্ক পাহারায় রেখেছে। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকরাও লাঠি হাতে বসে বাস-কাউন্টার পাহারা দিচ্ছেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল হচ্ছে অবরোধের বিরুদ্ধে।
শ্যামলী পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের মাস্টার প্রভাত কুমার জানান, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী নেই, কোনো গাড়িও ছেড়ে যাবে না। যাত্রী হলে বিকেল বা সন্ধ্যার পর গাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা আছে।
প্রভাত জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে রাজধানী থেকে ৬০টির মতো গাড়ি ছাড়া হলেও অবরোধের মধ্যে যাত্রী আসছে না। শ্যামলীর সব কাউন্টার মিলিয়ে কিছু যাত্রী হলে গুছিয়ে বিকেলে দুয়েকটা গাড়ি ছাড়া হতে পারে। গতকাল বুধবার সাতটি গাড়ি ঢাকা ছেড়েছে। আজ অবরোধের শেষ দিনে গাড়ির সংখ্যা বাড়তে পারে।
গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আসগর আলী বলেন, যাত্রীরা আতঙ্কে বাইরে বের হচ্ছেন না। জরুরি প্রয়োজনে দুয়েকজন এলেও গাড়ি বিকেলে যাবে বলে তাদের বসিয়ে রাখা হচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানের ভাঙ্গাচোরা গাড়ি আছে, তারা সেগুলো রাতের আঁধারে ছেড়ে দিচ্ছে, আমাদের মত যাদের নতুন বা দামি গাড়ি, তারা ছাড়ছে না।
এদিকে দূরপাল্লার গাড়ি না ছাড়ার কারণে জরুরি প্রয়োজনে বেরোনো লোকজন পড়েছেন বিপদে। গাবতলীতে আসা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ প্রবাস থেকে এসেছেন বা কেউ প্রবাসে যেতে কাগজপত্র তৈরির জন্য এসেছেন। কাজকর্ম সারলেও আন্তঃজেলার গাড়ি না পাওয়ার কারণে ঝামেলায় পড়েছেন তারা। উপায় না পেয়ে কেউ কেউ লোকাল পরিবহনেই গন্তব্য ভেঙে ভেঙে ফিরছেন।
মালয়েশিয়াফেরত আবু রায়হান ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে বসে আছেন গাবতলীতে। বগুড়ায় গ্রামের বাড়িতে যাবেন। আন্তঃজেলার কোনো গাড়ি না পেয়ে লোকাল গাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজধানী থেকে রাজবাড়িতে যাবেন আরজুল্লাহ বাকের। ঘণ্টাখানেক বসে থেকে লোকাল বাস সেলফি পরিবহনে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘাট পার হয়ে দৌলতদিয়া থেকে গন্তব্যে ফেরার চিন্তা তার।
জরুরি কাজে গ্রামের বাড়ি যশোর যাওয়ার জন্য মাকে নিয়ে গাবতলীতে এসেছেন বিল্লাল। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না। অগত্যা লালবাগের বাসায় ফিরে যেতে দেখা যায় মা-ছেলেকে।
দূরপাল্লার বাস না চললেও সাভার, নবীনগর, ইপিজেড ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটমুখী কিছু লোকাল বাস চলাচল করছে, তবে সংখ্যায় কম। এসব বাসেই মানুষ কর্মস্থল, বাড়ি বা গন্তব্যে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে অবরোধের কারণে বাস চলাচল করছে না বিধায় আয় নেই ড্রাইভার, হেলপার ও কলার বয়দের। তবে গাড়ি পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। এজন্য ড্রাইভার-হেলপারকে টার্মিনালে থাকা লাগছে। সেজন্য অবশ্য তারা খোরাকি পাচ্ছেন পরিবহন থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৩
জেডএ/এইচএ/