ঢাকা: রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়াসহ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা খরচায় সনদ সংশোধনের সুযোগ রেখে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন’ সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার।
সংশোধিত খসড়ায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের নিবন্ধনের নির্দেশনা ছাড়াও সনদ ভাষান্তর, মাঠ পর্যায়ে অফিস গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ নামে খসড়াটি স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে।
বিদ্যমান আইনে বলা হয়, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ পর্যন্ত বিদেশে বসবাসরত কোনো বাংলাদেশির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সংশোধিত আইনে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ পর্যন্ত বিদেশে বসবাসরত কোনো বাংলাদেশির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কোনো কর্মকর্তা নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিদ্যমান আইনে, ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনে রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুমতি দিতেন। সংশোধিত আইনে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন না হয়ে থাকলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার পূর্বানুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয় উক্ত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন করবেন।
সংশোধিত আইনে মাঠ পর্যায়ে অফিস গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের আওতাধীন অফিস গঠন করতে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করতে পারবে এবং তাদের চাকরির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হবে।
সংশোধিত নতুন আইনে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি কড়াকড়ি করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে, ‘ব্যক্তি’ অর্থ কোনো বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে বসবাসকারী কোনো বিদেশি এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী কোনো শরণার্থীকে বোঝানো হয়েছে। সংশোধিত আইনে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী অন্য কোনো দেশের নাগরিক এই ‘ব্যক্তি’ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেন না। ফলে তারা নিবন্ধনের আওতায় আসবেন না।
বিদ্যমান আইনে নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করা না হলে নিবন্ধক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পিতা-মাতা বা পুত্র বা কন্যা বা অভিভাবক অথবা নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য দিতে নির্দেশ সম্বলিত নোটিশ জারি করিতে পারবে না। সংশোধিত আইনে ‘নির্দিষ্ট সময়ে’ ও ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে’ উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে ফি বর্ধিতকরণ, সার্ভিস চার্জ আরোপের বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার সময়ে সময়ে গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত ফি বর্ধিতকরণ, সার্ভিস চার্জ আরোপ করতে পারবে।
বিদ্যমান আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন বহিতে বা ক্ষেত্রমত জন্ম বা মৃত্যু সনদে কোনো ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে, তা সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফিসহ সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের বরাবরে আবেদন করা যাবে। সংশোধিত আইনে বলা হয়, জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের কোনো সংশোধনের ক্ষেত্রে কোন ফি প্রযোজ্য হবে না।
সংশোধিত আইনে সনদ ভাষান্তরের বিষয়ে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধনের তথ্যের কোনো পরিবর্তন না করে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক রূপান্তর করতে পারবেন।
সংশোধিত আইনে রেজিস্ট্রার জেনারেল সময়ে সময়ে জন্ম বা মৃত্যু সনদ সংশোধন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বলা হয়, যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আদেশ জারি করিতে পারবেন।
বিদ্যমান আইনে বলা হয়, এ আইনের অধীন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অথবা নিবন্ধক (বা রেজিস্ট্রার জেনারেল) ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে মামলা দায়ের করিতে পারবেন। সংশোধিত আইনে বলা হয়, রেজিস্ট্রার জেনারেল বা জেলা প্রশাসক বা তার অধীনস্থ কোনো কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে মামলা দায়ের করিতে পারবেন।
বিদ্যমান আইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করপোরেশনের মেয়র বা, ক্ষেত্রমত, প্রশাসক কর্তৃক, নির্ধারিত সময় ও অধিক্ষেত্রের জন্য, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর বা ক্ষমতাপ্রদত্ত কর্মকর্তা; পৌরসভার মেয়র বা ক্ষেত্রমত, প্রশাসক বা তৎকর্তৃক, নির্ধারিত সময় ও অধিক্ষেত্রের জন্য, ক্ষমতাপ্রদত্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর; সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক, নির্ধারিত সময় ও অধিক্ষেত্রের জন্য, ক্ষমতাপ্রদত্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য; সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রদত্ত কোনো কর্মকর্তা নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিতের আইনি প্রতিশ্রুতি প্রতিপালনে ও জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করার জন্য বিদ্যমান জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ ও সুপারিশ আসে। এজন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ ১৫টি ক্ষেত্রে সংশোধন, যোজন-বিয়োজন আনয়ন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধন প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধন প্রস্তাব পর্যালোচনা বিষয়ক সভা হয়। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধন প্রস্তাবের বিষয়ে বিভিন্ন ধারা, উপ-ধারার প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশনা দেন। খসড়াটি সর্বসাধারণের মতামতের জন্য এ কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস