ঢাকা: ‘আমার স্বামী তো ছিলেন পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার। কোনো শ্রমিক আন্দোলনে যাননি।
রোববার (১২ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন নিহত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস পারভিন। এ সময় মায়ের পাশে বসে ‘বাবা বাবা’ বলে কাঁদছিল সাড়ে আট বছরর বয়সী তাদের একমাত্র সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জালাল উদ্দিন। গত বুধবার সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জালাল উদ্দিনের শরীরে ছররা গুলি লাগে। সেদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ইসলাম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। একই সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার পোশাকশ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০) মারা যান।
নিহত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস পারভিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে আমার স্বামী কারখানায় গিয়েছিলেন। আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় তিনি বাসায় ফিরছিলেন। ঠিক বাসার সামনে তার জালালের গায়ে গুলি লাগে। ’
এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নার্গিস। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করে আমার জীবনটাও নিভিয়ে দিয়েছে। আমার সন্তান এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে?’
মায়ের পাশে বসে ‘বাবা বাবা’ বলে কান্না করছিল তাদের একমাত্র সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া। সে গাজীপুরের একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। জান্নাতুল বারবার মায়ের কাছে জানতে চাচ্ছিল তার বাবার কী হয়েছে? বাবা কি আর আসবে না?
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন। তাঁরা সাত ভাইবোন। গুলিতে বড় ভাইয়ের আহত হওয়ার খবর শুনে দুবাই থেকে আজ সকালে দেশে ফিরে এসেছেন জালালের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম। দেশের মাটিতে পা দিয়েই বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শোনেন তিনি। হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে ভাতিজিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন তিনিও।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে একটি সূত্র জানায়, জালালের ময়নাতদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী বিকেলে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। তবে ওই সূত্রটি আরও দাবি করেন, ময়নাতদন্তের সময় মৃতদেহের শরীরে ছররা গুলির প্লেট দেখতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
গাজীপুরে বিক্ষোভে আহত পোশাকশ্রমিক জালাল মারা গেছেন
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এজেডএস/এমজেএফ