ঢাকা: ইন্টারনেটের মান না বাড়ালে, দাম না কমালে এবং ডিভাইসের পরিমাণ ও ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াতে না পাড়লে ‘স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ’ সফল হবে না বলে মনে করে গ্রাহক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
নির্বাচন কমিশন স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ চালুর একদিন পর সোমবার (১৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন নাগরিক বা ভোটারের তথ্য সংগ্রহ যেমন ভোটকেন্দ্র, ভোটার নম্বর এমনকি প্রার্থীদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া; সেই সাথে প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের জন্য স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ উদ্বোধন করেছে। কিন্তু ইন্টারনেটের দাম-মান, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারের পরিমাণ ও ব্যবহারের সক্ষমতা যদি বৃদ্ধি করা না যায় তাহলে স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ তৈরির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে না।
বিবৃতিতে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রযুক্তিবান্ধব এবং আগামীতে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে চাওয়ার পরিকল্পনাকে আমরা স্বাগত জানাই এবং নির্বাচন কমিশনের এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোটারদের এবং প্রার্থীদের হয়রানি অনেকাংশে অনেকাংশে লাঘব হবে বলে আমরা মনে করি। এই অ্যাপ তৈরিতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ার মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ২১ কোটি টাকা। আমরা এখনো জানি না ভোটারদের তথ্য নিরাপত্তা এবং ভোটারদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা করেছে কিনা। ইভিএম চালু করার পূর্বে এবং ভোট গ্রহণের পূর্বে ভোটারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, এক্ষেত্রেও নির্বাচনের আগে এই অ্যাপ ব্যবহারের সক্ষমতা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ভোটারদের সচেতন করবে নির্বাচন কমিশন বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪০ জন। এর বিপরীতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিবিএস-এর পরিসংখ্যান মতে ৩৮.৯ শতাংশ। এই জরিপ পরিচালনা করা হয় ২০২২ সালের ২৯ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত। গত ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০.৬৮ শতাংশ। সে হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ। অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএমএস বলছে, বাংলাদেশে ৪১ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ডিভাইস ব্যবহার করে। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি, কমিশনের হিসাব হচ্ছে, যদি ৯০ দিনের মধ্যে কেউ একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রকৃত ডিভাইস বা ইন্টারনেট সক্রিয়ভাবে এখন পর্যন্ত কমিশন প্রকাশ করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যদি দেশে ইন্টারনেটের দাম বেশি থাকে অন্যদিকে ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বা মান দুর্বল থাকে তাহলে এই ইলেকশন অ্যাপস ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে গ্রাহকদের হাতে যদি স্মার্ট ফোন বা অ্যান্ড্রয়েড একটি ডিভাইস না থাকে তাহলেও কিন্তু এই অ্যাপস ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার ধরে নিলাম সবই আছে কিন্তু গ্রাহকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে তাহলেও কিন্তু এটি কাজে আসবে না। অন্যদিকে গ্রাহককে ব্যবহারের সচেতনতার পাশাপাশি কমিশনকে গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে উচিত হবে কমিশন অর্থাৎ বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, আইএসপিএবি, গ্রাহক প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকে নিয়ে এই অ্যাপস আরও কীভাবে ব্যবহার উপযোগী করা যায় এবং সাধ্য সামর্থ্যের মধ্যে আনা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা অত্যন্ত জরুরি বলা আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজেএফ