ঢাকা, শনিবার, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ০১ মার্চ ২০২৫, ০০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাটে টানা বর্ষণে বিপাকে বোরো চাষিরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
বাগেরহাটে টানা বর্ষণে বিপাকে বোরো চাষিরা

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বাগেরহাটে টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা। এ ছাড়া মাঠঘাট ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি রয়েছে পানির নিচে।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ভারী বর্ষণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ধানের চারা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। যার প্রভাব পড়বে বোরো উৎপাদনে।  

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বাগেরহাটে ৬৫ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বোরো রোপণ করবেন কৃষকরা। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। বাগেরহাটে মূলত নভেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বোরো মৌসুম চলে। বোরো রোপণের জন্য চাষিরা নভেম্বরের শুরু থেকে চারা তৈরির জন্য ক্ষেতে বীজ ধান বোনা শুরু করেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া, ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমিতে চাষিরা বীজ ধান ফেলেছেন। জমিতে ফেলা বীজ ধান বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে। বীজ ধান ফেলার জন্য প্রস্তুত করা জমির উপর এক থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানি রয়েছে। এ বৃষ্টি যদি স্থায়ী হয় তাহলে অনেক বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক শেখ রুস্তম আলী বলেন, ১৮ কেজি বীজ ধান প্রস্তুত করেছিলাম চারার জন্য। যে জমিতে বীজ বুনবো সেখানে এখন প্রায় ২ ফুট পানি। আগামী শনিবারের (১৮ নভেম্বর) মধ্যে পানি না কমলে আমার ৬ হাজার টাকার ধান পানিতে ফেলে দেওয়া লাগবে।

পার্শ্ববর্তী গ্রাম পদ্মনগরের শহিদুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার বীজ ফেলেছিলাম। চারা সামান্য বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু এখনতো চারার উপর দেড় ফুট পানি। কী হবে জানি না।

শুধু রুস্তম-শহিদুল নয়, কয়েক হাজার চাষির একই অবস্থা। বৃষ্টিতে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে বেশকিছু এলাকায় ঝড়ে পেঁপে ও কলা গাছ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি স্থায়ী হলে সবজি চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

অন্যদিকে আমন চাষিরাও শঙ্কায় রয়েছেন। বেশকিছু এলাকায় আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে আমন ধান। ঝড় ও বৃষ্টির স্থায়িত্ব বাড়লে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী আমন চাষি রেজাউল গাজী বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে ধান একদম নুয়ে পড়ে মাটির সঙ্গে মিছে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে ধান। কী হবে জানি না।

মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের কৃষক প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঝড়ে আমার ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১০০ এর বেশি পেঁপে গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পেঁপে ছিল। এ ছাড়া সাম্মাম গাছেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনও সময় রয়েছে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কৃষকরা। তবে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। ঝোড়ো হাওয়া বাড়লে আমন ধানের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।