বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস পূজা শেষ হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে পুণ্য স্নান করেন পুণ্যার্থীরা।
পুণ্য স্নানের সময় পুণ্যার্থী মনোবাসনা পূরণের জন্য দোয়া করেন। সাগর পাড়ের বালুতে বসে তারা স্রষ্টার আরাধনা করেন। এসময় ডাবসহ বিভিন্ন ফল এবং লোকালয় থেকে নেওয়া কিছু ফুল ভোগ হিসেবে দিয়ে থাকেন ভক্তরা। এবারের রাস উৎসবে ২৫ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন রাস পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু।
তিনি বলেন, খুবই শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থী নির্বিঘ্নে পূজা আর্চনা ও পুণ্য স্নান করেছেন। পুণ্য স্নান শেষে সকাল ৯টার পরেই পুণ্যার্থীদের নিয়ে আমরা রওনা দিয়েছি। আশা করি সবাই নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাবেন। তবে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের দাবি ছিল পূজার পাশাপাশি আগের মতো কবিগান, শাস্ত্রীয় গান ও ধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা থাকলে রাস পূজাটি আরও ভালো হত।
রাস পূজায় অংশগ্রহণকারী অর্নব তালুকদার বলেন, প্রথমবার রাস পূজায় এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে। তবে একটু কবিগান ও শাস্ত্রীয় গানের ব্যবস্থা থাকলে খুব ভালো হত।
খুলনার রুপসা এলাকার কাকলী দেবনাথ বলেন, লঞ্চে যাওয়া ও থাকায় কিছুটা কষ্ট হলেও, সার্বিক ব্যবস্থা ছিল খুব ভালো। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। পুণ্য স্নান করে ঠাকুরের কাছে মনের কথা বলেছি। আবারও আসার ইচ্ছে আছে এখানে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, রাস পূজা উপলক্ষে বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়। সবকিছু সঠিকভাবেই হয়েছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাস উৎসবের ইতিহাস: দুবলার চরের রাস উৎসব প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন। আবার কারো কারো মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাস নৃত্যে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় আয়োজিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন ও পুণ্য লাভে গঙ্গা স্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে বসে রাসমেলা।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দূবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
আরএ