ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
বগুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন

বগুড়া: বগুড়ার সদর উপজেলায় ২০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।  

শনিবার (০৯ ডিসেম্বর) উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুমিড়া হাপুনিয়া পাড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।

 

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে জুঁই খাতুন নামে রয়েছেন এক তরুণী। জন্মের আগেই তিনি তার বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর মায়ের সঙ্গে আশ্রয় হয়েছিল নানাবাড়িতে। ৬ বছর বয়সে মাও মারা গেলে এতিম জুঁই খাতুনের দায়িত্ব নেন বৃদ্ধ নানা-নানি। লেখাপড়া চালিয়ে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ইতিহাস বিভাগে সম্মান (অনার্স) শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এর পরপরই তার নানিও মারা যান। এখন বৃদ্ধ নানা আব্দুল গণি ছাড়া কেউ নেই জুঁইয়ের। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া নানার পক্ষে সংসার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে জুঁইয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো দায় হয়ে পড়েছে।  

বানদীঘি ইসপপুর পাড়ার জুঁই খাতুনের মতোই করুণ অবস্থা ঘোলাগাড়ি গ্রামের সুবর্ণা রানীর। তার জন্মের আগে থেকেই বাবা কারাবন্দি। এ কারণে শিশু সুবর্ণাকে রেখে মা বিয়ে করেন অন্যত্র। দাদা-দাদি প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন সুবর্ণার। এবার ঘোলাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে সুবর্ণা। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে লেখাপড়ার চালানোর সামর্থ্য নেই তার দাদা-দাদির। এমনই ২০ জন অসহায় নারী ও শিশুর জন্য বগুড়ায় যাত্রা শুরু হলো বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হাপুনিয়া পাড়ায় আগে থেকেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য শুভসংঘের স্কুল চালু করা হয়েছে। এই স্কুল পরিদর্শনে এলে স্থানীয় নারীরা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি জানান। এ কারণে ওইসব নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাজার হাজার নারী বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন।  

তিনি বলেন, শুধু যে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তা নয়, প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে একটি করে সেলাই মেশিন পাচ্ছেন, ফলে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই তারা অর্থ উপার্জন করে পরিবারে চাহিদার একাংশ পূরণে সক্ষম হচ্ছেন।  

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে গত বছর এমন একটি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এটি বগুড়ায় দ্বিতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষ করার পর প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর হাতে একটি করে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া হাপুনিয়া পাড়ার রুমি বেগম জানান, যে ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে তারা সবাই নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য। তাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সেলাই প্রশিক্ষণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল পরিদর্শন করেন ইমদাদুল হক মিলন। গত বছর ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হওয়া ওই বিদ্যালয়ে এখন ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আগে সেখানে একজন শিক্ষক থাকলেও চলতি মাস থেকে আরও একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নার্সারি ও শিশু শ্রেণির এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি পোশাকসহ যাবতীয় ব্যয় বসুন্ধরা শুভসংঘ বহন করছে বলেও জানান কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক।

উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বগুড়া শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক আশফাকুর রহমান চন্দনসহ শুভসংঘের সদস্যরা। হাপুনিয়া পাড়ায় গত বছর থেকে চালু হওয়া বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের পাশেই যাত্রা শুরু হলো সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।