ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেতে বাবা মো. মফিজের সঙ্গে দেখা করতে মো. সুমন (৩৫) যখন মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন বায়না ধরে নয় বছরের শিশু ইয়াসিনও। সেও যাবে দাদার সঙ্গে দেখা করতে।
গত বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে খিলক্ষেত বাজার যাত্রী ছাউনি সংলগ্ন প্রধান সড়কে বেপরোয়া গতির একটি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি কেড়ে নেয় ইয়াসিনের প্রাণ। একই ঘটনায় গত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উজ্জ্বল পান্ডে (২৬) ও আমরিনা (২৭) নামে আরও দুজন। শিশুটির বাবা মো. সুমন (৩৫) ভর্তি আছেন ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সুমনের শরীরের অবস্থা অনুযায়ী ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার দুই পা ভেঙে যাওয়ার কারণে টান দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ডান হাত বাহু থেকে কব্জি পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা।
আহত সুমনের কাছে যেতেই তার পরিবারের সদস্যরা বলছিলেন, সুমনের শিশু সন্তান মারা গেছে, এটা তিনি জানেন না। তিনি ধীরগলায় বারবার কেবল জানতে চাইছেন, তার ইয়াসিনের কথা। স্বজনরাও তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে, ইয়াসিন বাসায় আছে।
এক পর্যায়ে আহত সুমন বলতে থাকেন, ‘আমার সন্তান ইয়াসিনের বাম হাত আমি ধরে রেখেছিলাম। তার ডান হাতে ছিল দাদার দেওয়া জুস। রাস্তার পাশে ফুটপাতের সাইডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপর কী হলো আর বলতে পারছি না। ’
এসময় পাশে থাকা সুমনের বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তারা জানান, ইয়াসিন মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। বাবার সঙ্গে গিয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিল। খিলক্ষেতের সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় ইয়াসিনকে কেড়ে নেয় বেপরোয়া গতির ল্যান্ডক্রুজার গাড়িটি। তখন তার মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
সুমনের বাবা ও ইয়াসিনের দাদা মো. মফিজ বলেন, খিলক্ষেত এলাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করি। গতকাল খাবার নিয়ে আমার ছেলে ও নাতি আমাকে দেখতে গিয়েছিল। মাস শেষ বলে আমার পকেটে টাকা ছিল না। তাই দোকান থেকে বাকিতে ১০ টাকা দামের পাঁচটা জুস আমার নাতি ইয়াসিনকে দেই। এছাড়া দুইটা চিপসও কিনে দিয়েছিলাম, আমার ছেলে ও নাতি চিপস খেয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, সুমনের অবস্থা অনেক খারাপ। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বড় ধরনের ফ্র্যাকচার আছে, বিশেষ করে দুই পায়ে ও হাতে। এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত দেওয়া হচ্ছে। আইসিইউতেও নেওয়া লাগতে পারে তাকে।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, গাড়িচাপায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যাওয়া গাড়িটির চালক নাবিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যতটুকু জানা গেছে ল্যান্ডক্রুজার গাড়িটির একজন নারীর নামে রেজিস্ট্রেশন আছে। এই ঘটনায় মারা যাওয়া শিশু ইয়াসিন, আমরিনা ও উজ্জ্বল পান্ডের পরিবারের আলাদা আবেদনের কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ তিনটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
এজেডএস/এইচএ/
খিলক্ষেতে নিয়ন্ত্রণ হারানো জিপ কেড়ে নিল ৩ প্রাণ