ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শৈত্যপ্রবাহ না আসতেই শীতে কাঁপছে মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৪
শৈত্যপ্রবাহ না আসতেই শীতে কাঁপছে মানুষ

রাজশাহী: রাজশাহীতে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সূর্যোদয় হয়েছে ভোর ৬টা ৫১ মিনিটে। কিন্তু বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।

 

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে ছিল রাজশাহী শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘন সবুজ প্রকৃতি ধারণ করেছিল ধোঁয়াটে রূপ। এরপর কুয়াশা কেটে গেলেও আকাশে মেঘ থাকায় সূর্যের কিরণ পোঁছাতে পারেনি পদ্মাপাড়ের এ শহরে। এর মধ্য হু হু করে বইছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। তাই এ বছর শৈত্যপ্রবাহ শুরুর আগেই কাঁপছে রাজশাহীর মানুষ।  

জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজীব খান বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আজ আবারও তাপমাত্রা নামল। মাত্র একদিনের ব্যবধানে এক লাফে তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সকাল ৭টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এ ছাড়া ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এর মধ্যে গত ৯ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ জানুয়ারি ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই আবহাওয়ার সেই হিসেবে রাজশাহীতে এখনও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। এরপরও শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে রাজশাহীতে। শেষ পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে এরই মধ্যে শিশু-কিশোর ও যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই জবুথবু হয়ে পড়েছেন।

এর কারণ কী- জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) কামাল উদ্দিন বলেন, আজ রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এরপরও তা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভব হচ্ছে। এর কারণ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান হঠাৎ করেই কমে গেছ। আর রোদ না থাকায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভব হচ্ছে। আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৬ ডিগ্রি।

আকাশে রোদ থাকলে এমনটা অনুভূত হত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার শীত এসেছে দেরিতে। মাত্র কয়েক দিন থেকেই তাপমাত্রা কমছে। আর কেবলই বাড়তে শুরু করেছে শীত। এ জানুয়ারিতে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে বলেও জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এদিকে পৌষের শেষ সপ্তাহে রাজশাহীর তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। ঘন কুয়াশায় এখন প্রায় পুরোদিনই মুড়ে থাকছে এ শহর। দিনভর উত্তরে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে পথে-প্রান্তরে থাকা ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষগুলোকে।  

খোলা আকাশের নিচে থাকা এ হতদরিদ্র মানুষগুলো শীতে নাকাল হয়ে পড়েছেন। একটু উষ্ণতার খোঁজে পথের পাশে খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বেলে ঘিরে বসে থাকছেন তারা। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছেন পুরোনো শীতবস্ত্রের মার্কেটে। আর সামর্থ্যবানরা দৌড়াচ্ছেন অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে। হালে তাই শীতবস্ত্রের কেনাবেচাও জমে উঠেছে।

এ ছাড়া সমাজের দুস্থ মানুষজন একটি কম্বলের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের লম্বা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এরপরও একটি বড় অংশ শীতবস্ত্রের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এ শীতে তারা নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত পার করছেন।  

ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অচলবস্তা কাটছে না। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শীতের কারণে দিনমজুরদের কাজ কমে গেছে। তাই অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

আজ ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছিল রাজশাহী। এ সময় দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের নিচে নেমে আসায় রাজশাহীর সড়ক-মহাসড়কের যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বিকেলে ফের ঘন কুয়াশায় মুড়ে আসে প্রকৃতি। এতে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও গুটিশুটি হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকোপে হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে নবজাতক শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।  

এ ছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও বয়স্করাও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি, কাশি ও হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানান এ চিকিৎসক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৪
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।