নেত্রকোনা: দেশে দুস্থ, গরিব, অসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে ভিজিট কম রাখেন বা একেবারেই রাখেন না এমন চিকিৎসকও আছেন। যাদেরকে আমরা মানবিক ডাক্তার বলি।
এমনই একজন মানবিক ডাক্তার নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাকসুদা আক্তার রিমি।
তিনি সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবারে বিনা পারিশ্রমিকে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
শুধু তাই নয়; একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সবসময় ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি।
রিমির মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা দেবেন। মায়ের ইচ্ছা পূরণে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন রিমি। আর চিকিৎসক হওয়ার পেছনে ছিল মুক্তিযোদ্ধা বাবার অনুপ্রেরণা। সেই পথ ধরে নিজের পেশাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মানুষের কল্যাণে।
রিমি মনে করেন, অর্থ উপার্জন করাই সফলতা নয়, বরং একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারলেই আসল সার্থকতা। ছাত্রজীবন থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিলেন ডা. মাকসুদ আক্তার রিমি।
তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ৩৯ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে যোগদান করেন সুনামগঞ্জ জেলার হাসান ফাতেমাপুর ইউনিয়ন সাব সেন্টারে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। সেখানে সুনাম এবং সাফল্যের সঙ্গে দুই বছর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর ২০২২ সালে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
ডাক্তার রিমি নিজ জেলায় এসেই শুরু করেন এই মানবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। রিমির বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, নাম হাজী মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি পেশায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে তার কর্মজীবন অতিবাহিত করেন যার সুনাম এখনো মানুষের মুখে মুখে।
ডাক্তার রিমির চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা সবুজ মিয়া বলেন, আমার বাচ্চার অনেক সমস্যা ছিল। আপার চিকিৎসা নিয়ে এখন আমার ছেলে অনেকটা ভালো আছে। আবার দেখা করতে এসেছি, আমরা গরিব। শুনে তিনি কোনো ফি নেননি, ওনার কথা আচার ব্যবহার খুব ভালো। উনাকে আমরা দুর্গাপুরবাসী আশীর্বাদ হিসেবে পেয়েছি, আল্লাহর কাছে দোয়া করি উনি যাতে সুস্থ থাকেন এবং আমাদের গরিবদের সেবা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার ফ্রি চিকিৎসাসেবার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার মাকসুদা আক্তার রিমি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার অফিস টাইম শেষ করে যতটুকু সময় পাই আমার চেম্বারে অনেক সময় রোগী দেখে থাকি। আর এর মাঝে সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আমি ভিজিট ছাড়াই রোগী দেখি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সপ্তাহের সাতদিনই বিনা ভিজিটে সেবা দিয়ে থাকি। কারণ আমার বাবা ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার উদ্দেশ্য অসহায় মানুষের সঠিক সেবা দান করা। সত্যি বলতে টাকা পয়সাই জীবনের সবকিছু না। মানুষের ভালোবাসা আর দোয়া পাওয়ার জন্যই আমার এই উদ্যোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএএইচ