নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফাউন্ডেশনের ময়ূরপঙ্খী লোকজ মঞ্চে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
আবহমান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছরই মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব আয়োজন করে থাকে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মেলা চত্বর ঘুরে দেখেন। পরে সন্ধ্যায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কাজী নুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
লোক ও কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সোনারগাঁ ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্থান। সোনারগাঁয়েই ইতিহাস ও ঐতিহ্য লালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্বের দরবারে সোনারগাঁকে কীভাবে পরিচিত করা যায়, সেভাবেই বর্তমান সরকার কাজ করে যাবে।
তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক এখানে আসবেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সর্বদা তৎপর থাকবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
মাসব্যাপী এ লোক কারুশিল্প মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শন, লোকজীবন প্রদর্শন, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বাহারী পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলা, কর্মরত কারুশিল্পীর কারুপণ্যের প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মেলা ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ ১০০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতযশা ৬৪ কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে মেলায় অংশ নেবেন।
এ বছর মৌলভীবাজার ও ঝালকাঠীর শীতল পাটি, মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁ-টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশ-বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া পুতুল, বন্দরের রিকশা পেইন্টিং, কুমিল্লার তামা-কাঁসা-পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীসহ ১৭ জেলার কারুশিল্পীরা মেলায় অংশ নেবেন।
এবারো মেলায় বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কারুশিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ১৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী লোকজ উৎসব প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান লোকজ মঞ্চে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি গান, জারি-সারিগান, হাছন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সংগীত, ক্ষুদ্র- নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ নৃত্যনাট্য, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, মুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান, লোকগল্প বলা ইত্যাদি পরিবেশিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
এমআরপি/আরএইচ