ঢাকা: রাজধানীতে শীতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি।
শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট, কাজীপাড়া ও পল্লবী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তার মোড়ে এসব পিঠা বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা ফুটপাতে মাটির চুলা, এলপি গ্যাস ও কেরোসিনের চুলা বসিয়ে পিঠা তৈরি করছেন। এসব দোকানে শীতে চিতই ও ভাপা পিঠারই বিক্রি বেশি। ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী খেজুরের গুড়, চালের গুঁড়া, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে পিঠা তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও চিতই পিঠার সঙ্গে ক্রেতাদেরকে সরিষার ভর্তা ও শুটকির ভর্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ভাঁপা পিঠা ১০-২০ টাকা ও চিতই পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
ফার্মগেট বাস স্ট্যান্ড এলাকার পিঠা বিক্রেতা মো. হামিদ জানান, প্রতিদিন তিনি গড়ে চার হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন। এতে তার লাভ হয় ৯০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। চিতই পিঠার সঙ্গে ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরিষা ও শুটকির ভর্তা দেন।
হামিদ জানান, শীতকালে পিঠা বিক্রি করি। অন্য সময় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করি। এছাড়াও মাঝে মাঝে চালাই রিকশা। যখন যেই কাজ পাই বা ব্যবসার সুযোগ পাই সেটাই করার চেষ্টা করি।
কাজীপাড়া বাস স্ট্যান্ড এলাকার পিঠা বিক্রেতা রিনা আক্তার। ২৫ বছর আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা এসেছিলেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। স্বামী অসুস্থ থাকায়। রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করছেন রিনা।
বাংলানিউজকে রিনা বলেন, সারা বছর পিঠা বিক্রি করি না শুধু শীতকাল এলেই পিঠা বিক্রি করি। অন্য সময় যে কাজ পাই সেটাই করার চেষ্টা করি। মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করি বা কখনো আমি শাকসবজি বিক্রি করি। সংসার চালাতে স্বামীকে সাহায্য করি। স্বামী অসুস্থ থাকায় আমাকেও পরিবারের জন্য উপার্জন করতে হয়।
তিনি বলেন, শুধু চিতই আর ভাপা পিঠা বিক্রি করি। শীত পড়লে পিঠা বিক্রি ভালো হয়। শীত যত বেশি, দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও তত বেশি হয়।
পল্লবীর কালশী রোডের পিঠা বিক্রেতা বিউটি আক্তার ও হারুন হাওলাদার। স্বামী-স্ত্রী মিলে বিক্রি করেন পিঠা। ৩৫ বছর আগে ভোলা থেকে তারা ঢাকা আসেন। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভালো থাকা, ভালো খাওয়ার আশায় ঢাকা আসেন। দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের সংসার।
পিঠা বিক্রেতা বিউটি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রী আমরা দুইজনেই ছেলে-মেয়েদের ওপর নির্ভর না হয়ে পিঠার ব্যবসা করি। মেয়েদের আগেই বিয়ে দিয়েছি। তাদের নিয়ে তেমন ভাবনা নেই আমাদের। দুই ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছি। ছেলের পরিবার নিয়ে আমরা একসঙ্গেই থাকি। ছেলের প্রয়োজনে আমরা সাহায্য করি। আমাদের প্রয়োজনে ছেলেরা সাহায্য করে। মিলেমিশে সবার উপার্জনে চলে আমাদের পরিবার। তবে সব সময় পিঠা বিক্রি করি না। শীতের মৌসুম শেষ হলে বিক্রি করি শাকসবজি। সামনে রোজার মৌসুম আসছে তখন বিক্রি করব ইফতার।
ভাপা, চিতই, পুলি ও তেলের পিঠা বিক্রি করি বিউটি। আগের থেকে চালের গুঁড়া ও খেজুরের গুড়ের দাম বাড়ছে। ফলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে পিঠা। আতপ চালের কেজি বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ টাকা। গতবছর আতপ চালের কেজি কিনেছি ৪৫ টাকা কেজি। এই বছর সেই চাল কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত বছর যেই গুড় কিনেছিলাম ২০০ টাকায় এবার কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। এসব কারণেই বেড়েছে পিঠার দাম। ৫ টাকার পিঠা বিক্রি করছি ১০ টাকায়।
ক্রেতা সুজন হায়দার জানান, আগে শীতের দিনে বাড়িতে মা-চাচিরা তাদেরকে হরেক রকমের পিঠা বানিয়ে খাওয়াতেন। এখন নানা কারণে ওইসব স্মৃতির হারিয়ে গেছে। তাই সুযোগ পেলেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা কিনে নিয়ে যাই।
ক্রেতারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এসব দোকানের পিঠা কিনে বাড়িতে যাচ্ছেন। শীতে পিঠার স্বাদ উপভোগ করছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
এমএমআই/এসআইএস