ঢাকা: ‘স্বাস্থ্য পুষ্টি ও সমৃদ্ধি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাড়ে ৯টা দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে র্যালি মৎস্য ভবন ও শাহবাগ ঘুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য ব্যাপারটা এমন নয় যে, একদিনে সব খাদ্য নিরাপদ হয়ে যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপদ হয়েছে। আমরা সোচ্চার হয়েছি, সচেতন করছি। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে যারা খাবার তৈরি করছে, যারা খাবার উৎপাদন করছে, প্রত্যেকটি সেক্টরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যাচ্ছে, তাদের সচেতন করছে, কোনো ব্যত্যয় পেলে জরিমানা করছে। আমরা যারা পরিচিত মুখ, আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে প্রত্যেককে বোঝাতে হবে জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, প্রত্যেককে প্রত্যেকের জায়গা থেকে জানতে হবে, যে আমি যে খাবারটা খাচ্ছি, যে রংটা ব্যবহার করছে, এটা শরীরের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, খাবারকে মজাদার করার জন্য, দেখতে সুন্দর করার জন্য রংসহ বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। যেগুলো ক্যানসারের কারণ হতে পারে। আবার একই তেল বারবার পোড়াতে পোড়াতে সেটির গুণগত নষ্ট হয়ে যায়। সেই তেল যখন মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সেটি আর নিরাপদ থাকে না।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার বলেন, আজ জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। ২০১৮ সাল থেকে আমরা এটি নিয়মিত পালন করে আসছি। এ বছরের স্লোগান ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সমৃদ্ধ চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই’। আমরা যদি উন্নত স্বাস্থ্য ও মেধা বিশিষ্ট জাতি গঠন করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এমন খাদ্য খাওয়া যাবে না, যেটা খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আবার ওমিপ্রাজল খেতে হয়। আমরা এ স্লোগানটি সবার মধ্যে পৌঁছে দিতে এ দিবস পালন করছি। আমাদের আরও অনেক কর্মসূচি আছে। এ র্যালির মাধ্যমে আমরা সেসব কার্যক্রমের উদ্বোধন করছি।
তিনি আরও বলেন, সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। আশা করি ভোক্তা থেকে শুরু করে খাদ্য উৎপাদক ও প্রক্রিয়াজাতকারীসহ সবার সচেতনতার মাধ্যমে একসময় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে সাধারণ র্যালির পাশাপাশি সাইকেল র্যালিরও আয়োজন করে বিএফএসএ। এতে সহযোগিতা করে বিডি টুরিস্ট সাইক্লিস্ট নামে একটি সংগঠন। প্রায় ১০০ জন সাইক্লিস্ট এ র্যালিতে অংশ নেন। তারা র্যালির পাশাপাশি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাইকেলের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক বিভিন্ন বার্তা প্রচার করবেন।
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপন করে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীন বাণীতে বলেন, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও বেগবান করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে দেশে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যদিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি গবেষণাধর্মী কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। মানুষের মধ্যে সর্বাত্মক সচেতনতা না এলে একটি পরিপূর্ণ নিরাপদ খাদ্য সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না।
এ ছাড়া খাদ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আগামী ৮ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেফ ফুড কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। এ কার্নিভালে বিভিন্ন নামিদামি খাদ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের খাদ্যপণ্য তৈরি ও পরিবেশনে কীভাবে নিরাপদ বজায় রাখে তার যথাযথ উপস্থাপন থাকবে। অন্যদিকে পিঠা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, লাইভ পিৎজা প্রস্তুত, কুইজিন তৈরি, জলের গান, কুঁড়েঘর ব্যান্ডসহ নানা মাত্রিক আয়োজন থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪
এসসি/আরবি