ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এসএসসি পাস করেই সর্বরোগের ডাক্তার সুজন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
এসএসসি পাস করেই সর্বরোগের ডাক্তার সুজন!

মেহেরপুর: ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাশ করে সর্বরোগের চিকিৎসক সুজন আলী (২৪)। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত তার নেই কোনো ডিগ্রি।

গাংনীতে অপচিকিৎসায় একদিন বয়সী শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়া চিকিৎসক সুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহম্মদপুর গ্রামের একটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম।  

এসময় সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকায় হালিমা ফার্মেসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল আল মারুফ, গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলী গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুন গত (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বামন্দীর একটি ক্লিনিকে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেন। ক্লিনিক থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালের দিকে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মোহাম্মদপুর গ্রামের হালিমা ফার্মেসিতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো চিকিৎসক শরিফুল ইসলামের উদ্দেশে নিয়ে যান। ওই ফার্মেসির চিকিৎসক চেম্বারে শরিফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় তার ছোট ভাই সুজন হোসেন শিশু রোগীদের চিকিৎসা দেন।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ভোকেশনাল শাখায় এসএসসি পাশ করেই চিকিৎসক বনে গেছেন সুজন হোসেন। সে এলাকার সর্বরোগের ডাক্তার নামে পরিচিত।

মৃত শিশুটির বাবা মনিরুল ইসলাম ও মাতা নাজমা খাতুন বলেন, আমাদের শিশু অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তার শরিফুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাই। এ সময় সেখানে শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে চেম্বার তার ছোট ভাই সুজন হোসেন বসে রোগী দেখছিলেন। আমাদের শিশুটিকেও দেখে সে নাবাসেট, এ্যাম্বুলিট ও পালমলিন নামের তিনটি সিরাপ লিখে দেন। কোনো সমস্যা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। বাড়িতে এসে ওষুধগুলো খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বামন্দীতে ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে কুষ্টিয়া নেওয়ার পথে মারা যায় সে।

এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যার দিকে মোহাম্মদ গ্রামে অবস্থিত সরকারি অনুদানহীন ওই ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন হোসেনকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলীকে দুই বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাংনী থানায় নেওয়া হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) নাদির হােসেন শামীম বলেন,
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) শরিফুল ইসলাম নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুরে রাবেয়া ফার্মেসি ও চেম্বার খুলেছেন। এলাকার মানুষের কাছে শিশু বিশেষজ্ঞ নামে পরিচিত ডাক্তার শরিফুল ইসলাম।

স্যাকমো চিকিৎসক শরিফুলের অনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই সুজন হোসেন শিশু থেকে শুরু করে সব ধরনের রােগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানতে পারি। পরে বৃহস্পতিবার সকালের পার্শ্ববর্তী বাওট গ্রামের একটি শিশু রোগীকে তিনি অপচিকিৎসা দিলে শিশুটি মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ওই চেম্বারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডাক্তার সুজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।