পঞ্চগড়: নিজ পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা পেতে পেঁয়াজ আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গেল কয়েকদিনে পঞ্চগড়ের দুই ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রামে ক্ষেত থেকে চুরি হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নতুন এই কাণ্ডে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, রাতের আঁধারে তাদের কষ্টের ফলানো ফসল তুলে নিচ্ছে একটি চোর চক্র। তবে কিছু কিছু এলাকায় এই চুরি ঠেকাতে রাতে পাহারা দিতে শুরু করেছেন অনেকে।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের পাঁচ/ছয়টি গ্রামে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে চুরির এই নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানান স্থানীয়রা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক পরিবারগুলো। তবে বিষয়টি এই দুই ইউনিয়নে নতুন এক আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তোলার মৌসুম চলছে। অন্যদিকে চারা পেঁয়াজ তোলা শুরু হবে আর কিছুদিন পরেই। অনেক কৃষক ধান বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। রাতেই তিন থেকে চার কাঠা জমিতে লাগানো পেঁয়াজ তুলে পাতাগুলো কেটে ক্ষেতেই ফেলে রেখে গেছে চোরেরা। এক কাঠা জমিতে প্রায় ৮ থেকে ৯ মণ পেঁয়াজ হয়। ৮০ টাকা কেজি দরে বর্তমানে কৃষকদের নতুন পেঁয়াজ পাইকারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এক কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ হয়। পেঁয়াজ চুরি হওয়ায় অনেকেই তাদের সম্বল হারিয়েছে। তবে সবার দাবি প্রথমবারের মতো এমন কাণ্ড দেখছেন তারা।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, ধান বিক্রি করে সেই টাকা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকা দিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। এই অবস্থা চললে মাঠে মারা যাবেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া, ভদ্রেশ্বর বর্মতোল, প্রধানগছ, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটাপাড়া গ্রামসহ পাঁচ/ছয়টি গ্রাম ঘুরে পেঁয়াজ চুরির এই খবর পাওয়া যায়।
ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া গ্রামের চাষি মকবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ আবাদ করেছি তিন কাঠা জমিতে। তিন কাঠা মাটিতে অন্তত ৩০ মণ পেঁয়াজ উঠতো। কিন্তু রাতের আঁধারে চোর এসে ক্ষেত থেকে সব পেঁয়াজ তুলে নিয়ে গেছে। যা ব্যয় করেছি সব শেষ। সারাদিন কাজ কাম করি। রাতের বেলা একটু ঘুমাই। পাহারা দেব কীভাবে। যারা এসব করছে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
একই এলাকার হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দুই কাঠা মাটিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ করেছি। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে চোর ক্ষেত থেকে সব পেঁয়াজ ও রসুন তুলে নিয়ে গেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে এসে দেখতে পাই ক্ষেতের ওপর গাছগুলো ফেলে রেখেছে। এখন খুব চিন্তায় আছি আমরা, আমার খুব বড় লোকসান হয়ে গেছে।
ভদ্রেশ্বর বর্মতোল গ্রামের শ্রী বিপ্লব চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমি আড়াই শতক জমিতে পেঁয়াজ করেছিলাম। চোর সব পেঁয়াজ নিয়ে গেছে। আমরা কৃষির ওপর নির্ভর করে চলি। এভাবে যদি আমাদের কষ্টের টাকায় ফলানো ফসল চুরি হয়ে যায়, তাহলে আমরা কৃষকেরা তো মাঠে মারা যাবো। এ বিষয়টি কৃষি বিভাগসহ প্রশাসনকে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
একই গ্রামের আব্দুল জলিল ও প্রধানগছ গ্রামের হাবিবুরসহ বেশ কয়েকজন চাষি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এমন ঘটনা আগে দেখি নি। এতদিন শুনেছি গরু চুরির কথা, ঘর-বাড়িতে চুরির কথা। এখন দেখছি ক্ষেত থেকে ফসল চুরি হচ্ছে। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে এই পেঁয়াজ যদি চুরি হয়ে যায়, আমরা চাষিরা কি করে খাবো। এখন আমরা সব চাষিরা মাঠ থেকে ফসল চুরি যাওয়ার ঘটনায় চিন্তায় পড়ে গেছি। তার পরেও আমরা রাতে পেঁয়াজ রক্ষায় ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি। বিষয়টি প্রশাসনসহ সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, বাজার ঊর্ধ্বগতির কারণেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি।
এই চুরির ঘটনা রোধে করণীয় বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুরি ঠেকাতে হলে কৃষকদের ফলন উত্তোলনের আগ পর্যন্ত মাঠ পরিদর্শনসহ সচেতন থাকতে হবে। এতে করেই এই চুরি রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৪
আরএ