বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে গৌরবজনক ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথমবার অংশগ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন সংকটপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া শুরু। এরপর ৩৭ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম স্থানে ছিল। তার আগেও কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের বহু গৌরবময় অধ্যায়ের অংশ বাংলাদশের শান্তিরক্ষীরা।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল নেপাল। এ সময় মিশনে নেপালের মোট শান্তিরক্ষী ছিল ৬০১ নারীসহ পাঁচ হাজার ৩৫০ জন। বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪৭ জন নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩০ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ছিল ৬৬০ জন নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে রুয়ান্ডা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, মালি, হাইতি, লাইবেরিয়া এবং লেবাননের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহলে তারা প্রশংসিত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকালে অনেক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে। এছাড়াও নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। নারী সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বিশেষভাবে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
জাতিসংঘ বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশকে ‘মডেল শান্তিরক্ষী দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শান্তিরক্ষী দিবসে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের উপস্থিতি বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তোলে।
বাংলাদেশ সরকার ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় আরও জোরদার করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী ভূমিকা রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার এই চলমান অভিযানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত নয়, বরং দেশের জন্য গর্ব ও সম্মানের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
এমএম