সিরাজগঞ্জ: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
এদিকে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল ও স্কুলের বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে দুদফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল-আমিন সরকার।
জানা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমান এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। চলতি বছরে এ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি তিন লাখ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন ব্যক্তি প্রধান শিক্ষকের নিজ কক্ষে ঘুষ দিতে আসেন। প্রথমে দুই লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিন লাখ নগদ টাকা তার হাতে দিলে তিনি সেটা গ্রহণ করেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুকুর লিজের টাকা, রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলন, ভর্তি ও সেশন ফি এবং চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন স্কুলটির সভাপতি আল-আমিন সরকার। তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম নোটিশ দেন তিনি। নোটিশে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাতটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এসব অনিয়মের মাধ্যমে আপনি বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। এ অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে কেন বেসরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সভাপতি বরার কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। প্রথম নোটিশ গ্রহণ না করায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আরও একটি নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির আজিজুল ইসলাম ও আজিবুল ইসলাম রাজিব জানায়, আমাদের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অনেক টাকা পয়সা মেরে নিয়ে উল্লাপাড়ায় বাড়িঘর করেছেন। শহিদুল স্যার আসার পর থেকে আমাদের স্কুল ধীরে ধীরে অবনতি হচ্ছে। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। সেশন ফি, স্মার্ট আইডি কার্ডের নাম করে এবং বই বিতরণের সময়ও টাকা নেয়।
অভিভাবক আব্দুল হাকিম বলেন, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বিদ্যালয়ের কাজকর্ম ঠিকমতো না করে ব্যক্তিগতভাবে চলছেন। তিনি আগে যে প্রতিষ্ঠানে ছিলেন সেখানেও নারী কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন। আমরা চাই তার মতো শিক্ষক যেন এই প্রতিষ্ঠানে না থাকে।
অভিভাবক জহুরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, নিজে শিক্ষক হয়েও আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলতে হচ্ছে। আমাদের স্কুলে লেখাপড়ার মান উঠে গেছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মিথ্যাবাদী ও দুর্নীতিবাজ। তিনি বিদ্যালয়ের পুকুর লিজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি নিয়োগ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই বিতরণ করেছেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল-আমিন সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষকের নামে আমাদের স্কুলে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একাধিকবার বলার পরেও তিনি কোনো হিসেব দেন নাই। সম্প্রতি তিনটি নিয়োগের কথা বলে তিন লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এসব কারণে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তিনি জবাব দেন নাই। যদি তিনি জবাব না দেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘুষ গ্রহণের ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়টি অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উল্টো সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও তাকে মারপিটের অভিযোগ করে বলেন, আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি। এ জন্য তিনি উল্টো আমার নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছেন। ভিডিওর ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো টাকা দেয় নাই, আমি নেইও নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৪
এসএম