কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ চার জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, সাতটি ককটেল, পাঁচ রাউন্ড অ্যামুনিশন এবং ১২ বোর এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) মধ্য রাতে এ অভিযান চালানো হয়। বুধবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি-আরসার অন্যতম প্রধান কমান্ডার এবং অর্থ শাখার প্রধান (ক্যাশিয়ার) মো. করিম উল্লাহ প্রকাশ মাস্টার কলিম উল্লাহ ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির অন্যতম দেহরক্ষী আকিজ’সহ চার আরসা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়।
গ্রেফতার করিম উল্লাহ প্রকাশ মাস্টার কলিম উল্লাহ (৩২) ২০ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ব্লক-এম/৩৩ এর আহাম্মেদ হোসেনের ছেলে, আকিজ (২৭) কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ৭ ব্লক ই/৩ মৃত মো. কায়সারের ছেলে, মোহাম্মদ জুবায়ের (২৯) ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ব্লক ই/৩ এর আবুল হোসেনের ছেলে ও সাবের হোসেন প্রকাশ মোলভী সাবের (৩৫) ২২ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ব্লক-বি/৪ এর মৃত হাসমত আলীর ছেলে।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার সদস্যরা ঘোনারপাড়াস্থ ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশনের ব্লক-৫ এর একটি ঘরে জড়ো হয়েছে। এমন খবরে র্যাব এর একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর সময় আরসার অন্যতম প্রধান কমান্ডার এবং অর্থ শাখার প্রধান (ক্যাশিয়ার) করিম উল্লাহ প্রকাশ মাস্টার কলিম উল্লাহ ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির এক সময়কার অন্যতম দেহরক্ষী আকিজসহ চারজন আরসা সন্ত্রাসীকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার করিম উল্লাহ প্রকাশ মাস্টার কলিম উল্লাহ ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। প্রথমে ১২ পরে ২০ নম্বর শিবিরে বসবাস শুরু করেন। এ সুবাদে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ক্যাম্প-২০ এর আরসা জিম্মাদার মৌলভী ইয়াসিনের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করেন। ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে গিয়ে আরসার প্রশিক্ষণ শেষ করে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্প-২০ এর এম/৩৩ ব্লকের জিম্মাদার এবং আরসার হয়ে হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মের কারণে তাকে ক্যাম্প-২০ এর হেড জিম্মাদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৬ সদস্যসের একটি অস্ত্রধারী গান গ্রুপ পরিচালনা করতেন তিনি। আরসার অস্ত্রধারী গান গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়ে অবস্থান করে থাকে। রাতে ক্যাম্পে ঢুকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে সকাল হওয়ার আগেই ক্যাম্প ত্যাগ করে পাহাড়ে চলে যেত। এছাড়া গ্রেপ্তার অপর তিনজনও ক্যাম্পের ভেতরে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা জানায়।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত র্যাব-১৫, কক্সবাজার সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেল এর প্রধান, স্লিপার সেল এবং ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার, অর্থ সমন্বয়ক, ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার এবং লজিস্টিক শাখার প্রধানসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ১০৩ জনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে ১০টি বিদেশি অস্ত্র, ৫২টি দেশীয় অস্ত্র, ১৪৪ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০.২১ কেজি বিস্ফোরক, ২৮ পিস ককটেল, চার পিস আইইডি, ১.৫ কেজি মার্কারী (পারদ) এবং চারটি হাত বোমা উদ্ধার করা হয় বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এসবি/আরআইএস