ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সৎভাবে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে: স্বাধীনতা পদকে মনোনীত ডা. হরিশংকর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৪
সৎভাবে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে: স্বাধীনতা পদকে মনোনীত ডা. হরিশংকর

ময়মনসিংহ: ‘সৎ মনে কাজ করলে মূল্যায়ন একদিন হবেই। যারা সৎ কাজ করবে, তাদের পুরস্কার আছে এবং থাকবেই।

তবে কর্মে থাকতে হবে সেবার মনোভাব। একজন চিকিৎসক কখনো টাকার মেশিন হতে পারেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতা পদক-২০২৪ এ মনোনীত ডা. হরিশংকর দাশ।

চিকিৎসাসেবায় অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদক-২০২৪ এ মনোনীত হয়েছেন ময়মনসিংহ নগরীর পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরিশংকর দাশ।   

শুক্রবার (১৫ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত ১০ জনের তালিকা প্রকাশের পর আলোচনায় আসে ডা. হরিশংকর দাশের নাম।

এরপর থেকেই জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসক, চিকিৎসক মহল, সুহৃদ-স্বজন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে থাকেন এ গুণী ব্যক্তি।  

রোববার দুপুরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে নগরীর পারমিতা চক্ষু হাসপাতালে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ডা. হরিশংকর দাশের। এ সময় তিনি তুলে ধরেন তার ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনের আদ্যোপান্ত। এর মধ্যে বিভীষিকাময় ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭০ সালে ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালী অঞ্চলের ভয়াবহতা এবং সর্বশেষ করোনাকালে নির্মম অভিজ্ঞতার নানান গল্প উল্লেখযোগ্য।      

এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. হরিশংকর বলেন, ‘কর্মজীবনে ৫২ বছর পার করেছি। দীর্ঘ কর্মজীবনের পর আজকের এই মূল্যায়নে আমি অভিভূত ও পুলকিত। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাকে এই মহান পদকে মনোনীত করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকব, বাকি জীবনটা মানুষের সেবা করে যেতে চাই’।  

ডা. হরিশংকর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল আমি চিকিৎসক হব, মানুষের সেবা করব। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতা যুদ্ধ। তখন আমি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আমি চলে যাই ভারতের আসাম প্রদেশের মাইনকা চর এলাকায়। সেখানে টানা চার মাস মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় জীবনবাজি রেখে কাজ করেছি। এই খবরে পাক-বাহিনী টাঙ্গাইল ভূঞাপুর উপজেলার নিকলা গোপাল গ্রামে আমাদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ডাক্তারি পাস করে নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করি। কখনো টাকা-পয়সার চাহিদা বেশি করিনি। অনেক সময় রোগীর গাড়িভাড়া-ওষুধও আমাকে দিয়ে দিতে হয়েছে।

করোনাকালে কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, করোনাকালে আমি ডায়াবেটিস, কিডনি ও প্রেসারের রোগী। তখন অনেক ডাক্তার করোনা আক্রান্তদের কাছে যেতেন না। কিন্তু আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪ ঘণ্টা আমার হাসপাতাল খোলা রেখে রোগীদের সেবা দিয়েছি। এতে আমি নিজেও করোনা আক্রান্ত হই। কিন্তু রোগীদের ছেড়ে আমি পালিয়ে যাইনি। এভাবেই আজীবন রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরে প্রয়াত ইন্দুভূষণ দাশ ও রেণুকা প্রভা দাশের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ডা. হরিশংকর দাশ। এরপর ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করে এই হাসপাতালেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।  

পরে তিনি ১৯৮৩ সালে চক্ষু চিকিৎসায় উন্নত ডিগ্রি নিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। সেখান থেকে ডিও এবং এমএএমএস ডিগ্রি  নিয়ে দেশে ফিরে ১৯৮৪ সালে পারমিতা চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই প্রতিদিন এক ঘণ্টা বিনামূল্যে রোগী দেখেন এবং প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতেও বিনামূল্যে রোগী দেখেন তিনি। খ্যাতিমান অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরিশংকর দাশ কর্মজীবনে মুক্তিযোদ্ধা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী-পরিচিতজন ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ অসংখ্য গরীব ও অসহায় রোগীদের কোনো পরামর্শ ফি ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।