ঢাকা: পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে বাড়ির পথে ছুটতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। এবার ঈদযাত্রা দুই দিন আগে শুরু হলেও আজও তেমন যাত্রীর চাপ নেই গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে।
শনিবার (০৬ এপ্রিল) সকালে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারের সঙ্গে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন যাত্রীরা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও তেমন ভিড় নেই। কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা।
এবার ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে ১০ এপ্রিল থেকে। তবে গত বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) থেকেই শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা। ভোগান্তিবিহীন যাত্রার জন্য পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
এদিকে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স টিমের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কোনো যাত্রী অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিআরটিএ এর পক্ষ থেকে প্রতিটি কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে মাইকিং।
তবে এত ব্যবস্থার পরও কাউন্টারগুলোর প্রতি বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠছে। আছে বিলম্বে বাস ছাড়ারও অভিযোগ। তবে যাত্রীদের এসব ভোগান্তি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ঈদ আনন্দের কাছে।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি আইটি কোম্পানিতে কাজ করা মেহেদী হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত দুইদিন দিন-রাত কাজ করেছি বাড়ি যাবো বলে। কাজ শেষ করতে পারায় ছুটি পেয়ে গেছি। কারণ ঈদের ঠিক আগে আগে রাস্তায় যানজট হয়। তাই একটু স্বস্তিতে যেতে আগেই বাড়ির পথ ধরেছি। তবে কিছুটা বাড়তি ভাড়া এবারও নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ সময়ে আমাদের রুটে নন এসি বাসের ভাড়া থাকে ৮০০ টাকা। সেখানে ৯৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কেয়া চক্রবর্তী যাচ্ছিলেন মাগুরা। তিনি বলেন, ভার্সিটি বন্ধ, তাই বাড়ি যাচ্ছি। তবে ভাড়া বেশি রেখেছে। ৬৫০ টাকার ভাড়া ৮৫০ টাকা রেখেছে। কাউন্টার থেকে বলছে, তারা খুলনার ভাড়া রেখেছে। আমি যাবো মাগুরা, খুলনার ভাড়া আমি কেন দেবো?
ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, যমুনা লাইনের যশোরের টিকেট কেটেছিলাম। বাস ছিল সাড়ে ১০টায়। কিন্তু এখন বলছে, সেই বাস আসবে না। পরের বাসে সাড়ে ১২টায়। এটা একটা ভোগান্তি।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন কাউন্টারে দায়িত্বরতরা। তারা বলছেন, যে গন্তব্য সেই গন্তব্যেরই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গগামী সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ফারুক হোসান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে এই টার্মিনালে যাত্রী কমে গেছে। আগে ঈদের এই সময় মানুষের জন্য টার্মিনালে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকতো না। এখন পুরো টার্মিনাল খালি।
একটি বাসের সিট প্ল্যান দেখিয়ে তিনি বলেন, মাত্র ১০টি সিট এখন পর্যন্ত ভাড়া হয়েছে। বাকি ৩০ সিটই ফাঁকা। ৮ ও ৯ তারিখে যাত্রীর চাপ বাড়বে। ওই দুই দিনের আমাদের কোনো বাসে টিকেট নেই।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। আমাদের বাস কুয়াকাটার। এখন কেউ যদি পথে নামতে চান, তাকে তো কম ভাড়ায় নেওয়া সম্ভব না। যদি অন্য গন্তব্যের বাসে ওঠেন তাহলে তো সেই রুটেরই ভাড়া দিতে হবে।
একই কথা বলেন হানিফ পরিবহনের কউন্টার মাস্টার মো. শুভ। তিনি বলেন, খুলনার বাসে খুলনারই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এখন কেউ যদি সেই বাসে মাগুরা গিয়ে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ করেন, তাহলে তো হবে না। তিনি মাগুরার বাসে গেলে সেই ভাড়াই যেতে পারবেন।
আজ যাত্রীর চাপ কম জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বাসে ৫-৬ আসন খালি যাচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে আমাদের কোনো বাসে টিকেট নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৪
এসসি/এফআর