সিরাজগঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে ঈদে উত্তরাঞ্চলবাসীর ঘরে ফেরার যাত্রায় গলার কাঁটা হিসেবে চিহ্নিত ছিল বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের সব রুট। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক ছাড়াও হাটিকুমরুল গোলচত্বর-চান্দাইকোনা রুটের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়তে হতো উত্তরাঞ্চলবাসীকে।
চিরচেনা সেই চিত্র এবার সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে দিগুণেরও বেশি হওয়ার পরও পূর্ণ গতিতেই চলাচল করছে। শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরতে পারা মানুষগুলোর মুখে উঠেছে আনন্দের হাসি। গাড়ি চালকদের মুখেও দেখা যায় প্রশান্তির ছাপ। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিতেও কার্পণ্য নেই তাদের।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেল তিনটা থেকে ৫টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সয়দাবাদ, মুলিবাড়ি, কড্ডার মোড় ও হাটিকুমরুল গোলচত্বরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কথা হয় বেশ গাবতলী থেকে আসা অভি এন্টারপ্রাইজের যাত্রী টেক্সটাইল শ্রমিক সাব্বিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন শান্তিপূর্ণ ঈদযাত্রা কত বছর দেখিনি, মনে করতে পারছি না। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় গাবতলী থেকে কড্ডার মোড়ে এসে পৌঁছেছি। এর আগে যতবার ঈদে বাড়ি এসেছি বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার আসতেই দুই ঘণ্টা লেগেছে।
উত্তরা পরিবহনের যাত্রী গার্মেন্টসকর্মী আব্দুল কাদের ও ওবায়দুল করিম বললেন, ঈদে এমন আনন্দদায়ক ভ্রমণ অনেক বছরই করা হয়নি। কোথাও যানজট নেই। তবে মহাসড়কে প্রচুর গাড়ি রয়েছে।
ইসলাম পরিবহনের যাত্রী গার্মেন্টসকর্মী সালমা ও রুমিনা বলেন, গাজীপুর থেকে আসছি। দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। চান্দুরার কাছে কিছুটা জ্যাম ছিল। এরপর এক টানেই গাড়ি চলে এসেছে।
উত্তরা পরিবহনের চালক মোক্তার হোসেন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, রাস্তাঘাট সুন্দর হয়েছে, মোড়ে মোড়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এ কারণে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আসতে পেরেছি। এমনটাই বলেন, এসআই পরিবহনের চালক মোতালেব, পিকআপ চালক ফজল, ট্রাকচালক রঞ্জুও।
যাত্রী ও চালকরা বলেন, প্রত্যেকবারই বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, নলকা, হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোলচত্বর, ঘুড়কা, ভুইয়াগাঁতী ও চান্দাইকোনা পয়েন্টে যানজট থাকতো। এবারও আমাদের মনে শঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগছে।
ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ঈদ-উৎসব স্বজনদের সঙ্গে উদযাপনের জন্য মানুষ এরই মধ্যে ঘরে ফিরছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যান চলাচল দিগুণ বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চাপহীন রয়েছে সব রুট। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ হাজার বেশি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, সোমবার সকাল থেকে গাড়ির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। দুপুরের পর যান চলাচলের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। পুলিশ তৎপর রয়েছে। কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজট হয়নি।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. জাফর উল্লাহ বলেন, গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো চাপ নেই। গাড়ির চাপ বেশি থাকলে আজকে রাতেই ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করা হবে। ড্রোন ক্যামেরার ভিডিও সরাসরি সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে লাইভ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৯ হাজার ৭৮০টি যানবাহন চলাচল করেছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সার্বিক চেষ্টা করেছে। জেলার সব মহাসড়কে ৭০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে পেট্রোল টিম, মোবাইল টিম। বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি রেকার রাখা আছে। দুর্ঘটনাজনিত কারণে গাড়ি বিকল হলে তাৎক্ষণিক সেটাকে সরিয়ে মহাসড়ক পরিষ্কার করা হবে। থ্রি-হুইলার ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
জেএইচ