ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু ডিসেম্বরে, উত্তরের পথে স্বস্তির প্রত্যাশা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু ডিসেম্বরে, উত্তরের পথে স্বস্তির প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

ঢাকা: ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের ট্রেন চলাচলে বর্তমানে একটিই পথ, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু। কিন্তু সেতুর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হতে লেগে যায় ২৫ মিনিটের মতো।

আরেকটি সমস্যা হলো, সেতুতে সিঙ্গেল ট্র্যাক থাকায় ট্রেনগুলোকে দুই পারের স্টেশনে সিগন্যালের জন্যে অপেক্ষা করতে হয়। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পার হতে গেলে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।

এ সমস্যা সমাধানে যমুনা নদীতে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। দেশের বৃহত্তম এ রেলওয়ে সেতুতে থাকছে ডাবল ট্র্যাক। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ সেতুর কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।  

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এ রেলসেতুর কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ।  

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করে অপারেশনে আসতে পারবে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। এ প্রকল্পে এখন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই, সব ঠিকভাবেই চলছে।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ। আর্থিক কাজের অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ।  

প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হলেও যাত্রী চলাচল শুরু হতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে ধারণা এ প্রকল্প কর্মকর্তার।

তিনি আরও বলেন, ফিক্সিং ও ট্র্যাক বসানো হচ্ছে এখন। একইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশনের কাজও শেষ করা হচ্ছে।

উত্তরের পথে আনবে স্বস্তির ছোঁয়া 

উত্তরবঙ্গের প্রধান তিন রুটের শেষ গন্তব্য পঞ্চগড়, বুড়িমারী, কুড়িগ্রাম রুটে ঢাকা থেকে স্বাভাবিক শিডিউলেই ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। আর ঈদ কিংবা শিডিউল বিপর্যয় হলে বিপাকে পড়তে হয় এ রুটের যাত্রীদের।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণের ফলে এ রুটে গড়ে এক ঘণ্টা সময় বাঁচবে। শিডিউল জটিলতা তৈরি হলে ডাবল লাইন হওয়ায় এ লাইনে ক্রসিংয়ে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না যাত্রীদের।  

ফলে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলার যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। যাত্রাপথে আসবে স্বস্তির ছোঁয়া।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সেতুতে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। সেতু পার হতে সাড়ে তিন থেকে চার মিনিটের মতো লাগবে। ফলে এখন যে এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হয়, সেই ভোগান্তি কমবে।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ৪৮টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু ব্যবহার করে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু উদ্বোধনের পর ৮৮টি ট্রেন চলবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই হবে পণ্যবাহী ট্রেন। এতে উত্তরবঙ্গ থেকে সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে রাজধানী ঢাকায়।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ। রেলসেতু চালু হলে এ পথে কনটেইনার পরিবহনের মাধ্যমে আয়ের নতুন পথও খুলে যাবে।

এ রেলপথে আয় বাড়াতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টেশনগুলোতে পণ্য পরিবহনে বিশেষ করে কাঁচামাল পরিবহনের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা শিল্পকারখানার কাঁচামাল রেলযোগে সরাসরি উত্তরবঙ্গে নেওয়ার সুব্যবস্থাও করতে হবে। তবেই এই রেলসেতুর পুরোপুরি সুফল আসবে।  

এ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানবিরুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে এ সেতুর মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগে যেমন গতি বাড়বে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রেলে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও তৈরি হবে।  

কী আছে প্রকল্পে

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দেশটির দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।  

দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা)।  

২০১৭ সালের মার্চে এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়।  

ডিপিপি সংশোধনে সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্টে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এ রেলসেতুর দুপাশে শূন্য দশমিক ০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার লাইন, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪  
এনবি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।