হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ঘিরে সন্দেহ ও আলোচনা ঘনীভূত হচ্ছে। কার্গো নিরাপত্তা মূল্যায়নে শতভাগ নম্বর অর্জনের সপ্তাহ না পেরোতেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি, ইউকে) পরিচালিত বিমানবন্দর মূল্যায়নে এক অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। গত ১২ অক্টোবর বেবিচক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সামগ্রিক মূল্যায়নে ৯৩ শতাংশ এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা (কার্গো) মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর অর্জন করেছে। একইভাবে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সামগ্রিকভাবে ৯৪ শতাংশ এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা (কার্গো) মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর পেয়েছে।
ডিএফটি মূল্যায়ন দল বেবিচকের প্রস্তুতি ও কার্যক্রমে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
ডিএফটি এয়ারপোর্ট অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকারের একটি আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বিদেশি বিমানবন্দরসমূহে যাত্রী ও কার্গো নিরাপত্তা মানদণ্ড যাচাই করা হয় এবং যুক্তরাজ্যের চাওয়া অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর বাস্তবায়ন পরীক্ষা করা হয়।
এই পরিদর্শনগুলো পরিচালনা করেন ডিএফটির অনুমোদিত ইন্সপেক্টর ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা, যারা সরেজমিনে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা যাচাই এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা পরীক্ষা করেন। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এবং পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে তা অব্যাহত থাকে।
বেবিচক জানায়, ডিএফটির কাছ থেকে পাওয়া এ ইতিবাচক মূল্যায়ন বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও সক্ষমতার প্রতিফলন। এটি বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এয়ারলাইন্সগুলোর আস্থা বাড়াবে, যাত্রী ও কার্গো ব্যবস্থাপনায় টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কমাবে।
বেবিচক সেদিন আরও জানায়, ২০১৬ সালে কার্গো স্ক্রিনিং নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য সরাসরি ঢাকাগামী কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। পরে বেবিচক ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে। ২০১৭ সাল থেকে যুক্ত হয় আধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), যা রপ্তানি কার্গো স্ক্রিনিংয়ে একটি যুগান্তকারী সংযোজন হিসেবে কাজ করে।
বেবিচক ধারাবাহিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও প্রক্রিয়াগুলোর উন্নয়ন ঘটিয়ে আসছে, যার ফলে বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা এখন আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে। এই অর্জন বাণিজ্য সহজীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিমানবন্দর মূল্যায়নে এই সাফল্য বেবিচকের দূরদর্শী নেতৃত্ব, বিমান নিরাপত্তা বিভাগের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং উভয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রয়াসের ফল বলে উল্লেখ করা হয়।
চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের অংশ?
ঘটনার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানান।
তিনি লিখেছেন, শাহজালালের আগুনের এই ঘটনার কারণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য জননিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা অপরিহার্য। বিশেষ করে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ও মিরপুরের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
এনসিপি নেতা সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি না। এগুলো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ। তথাকথিত তদন্ত কমিটির নাটক বাদ দিয়ে এর পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হোক।
এমআইএইচ/এমজে