নেত্রকোনা: জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দিতে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অর্থ নিলেও তিনি সে কাজ আগ্রহী ঠিকাদারকে দেননি, এমন অভিযোগও উঠেছে।
হাজী আব্দুল ওয়াহাব নামে মোহনগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও ঠিকাদার দাবি করা এক ব্যক্তি এ অভিযোগ করেন। তিনি মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগও দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল আব্দুল ওয়াহাব নামে ওই ব্যক্তি এ অভিযোগ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নেত্রকোনার মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার ৩০টি ওয়াশব্লক মেরামত কাজের টেন্ডার পাইয়ে দিতে বুয়েট শাখার সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা নেন নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান। কিন্তু টাকা নিয়েও তিনি কাজ দেননি।
ভুক্তভোগী সেই অর্থ ফেরত চাইলে তার ওপর চড়াও হন নির্বাহী প্রকৌশলী। পরে চিফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর অভিযোগ দেবেন বলে জানান আব্দুল ওয়াহাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে মশিউর রহমান তাকে বলেন, ‘যা খুশি কর। ওইসব চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমার কিছুই করতে পারবে না। ’
এরপর বিষয়টি নিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার তুষার মোহনের মোবাইল ফোনে কল করে অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন আব্দুল ওয়াহাব। কিন্তু তিনি কল কেটে দেন। পরে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও সুরাহার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ দেন ওয়াহাব।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রে আব্দুল ওয়াহাব উল্লেখ করেন, কলমাকান্দাতে হাওর প্রকল্পের ৫০টি নলকূপ বসানোর কাজ না করেই বিল উত্তোলন; ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জামালপুরে বাড়ি নির্মাণ ও বিভিন্ন কারণে স্টাফ এবং ঠিকাদারদের অশ্রাব্য গালাগাল ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্যের প্রকৌশলী মশিউর বুয়েটের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। দপ্তরে অভিযোগ দিলে কোনো কাজ হয় না, তাই বাধ্য হয়েই আপনার বরাবর আবেদন করলাম। প্রমাণক হিসেবে উনার নিজ হিসাব নম্বরে তিন লাখ টাকা জমাদানের ব্যাংক স্লিপের ফটোকপি সংযুক্ত করলাম। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
আব্দুল ওয়াহাবের ভাষ্য ছিল, নির্বাহী প্রকৌশলী টাকা নিয়েও তাকে কাজ দেননি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে বরং তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। বিষয়টি চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানানো হবে বললেও তিনি গালাগাল করেন। উপায় না পেয়ে ওয়াহাব লিখিত আকারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে অভিযোগ দেন। তিনি শুধু বিষয়টির সমাধান চান।
অভিযোগপত্রে ওয়াহাব যোগাযোগের জন্য যে নম্বরটি দিয়েছেন, সেটি বর্তমানে বন্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই অভিযোগ ভুয়া। যে অভিযোগ করেছে ওই নামের কাউকে আমি চিনি না, জানিও না।
ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা আমার স্টাফ জমা দিয়েছে। সেখানে একটা সই আছে, সেটা আমার হিসাব সহকারীর। যদি সেই ঠিকাদার জমা দিতো, তাহলে তো তার সই থাকতো। আমার হিসাব সহকারীর সই থাকতো না।
হিসাব সহকারী বা অফিসের স্টাফ টাকা জমা দিলে ব্যাংক জমার রশিদ অন্য ব্যক্তির হাতে কীভাবে গেল প্রশ্ন করলে মশিউর বলেন, এটা তো আমি জানি না। এটা আমারও প্রশ্ন। কারণ ওই স্লিপটা আমার কাছেও আছে।
এ বিষয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার তুষার মোহন বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াহাবের নম্বর আমার কাছে নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী তাকে কী বলেছেন, সেটা তিনিই জানেন। অভিযোগ থাকলে তিনি অফিসিয়ালি চিঠি দিক, আমরা ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের একটা অভিযোগ হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে কেউ এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ আমার কাছে দেয়নি। কোনো অভিযোগ এসেছে কিনা তাও বলতে পারব না।
নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না, পেলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
এমজে