রাজশাহী: রাজশাহীতে ঈদুল আজহার দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজার দামের চেয়ে অনেকটা কম দামে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংস পাওয়া যেত। বাজারদরের চেয়ে ১/২শ’ টাকা কমে কেনা যেত মাংস।
কিন্তু সেই মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই! রাজশাহীর বর্তমানে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। আর কোরবানির মাংসের ভ্রাম্যমাণ বাজারেও প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। নিত্যদিনের মাংসের দোকানের দাম আর সংগ্রহ করা মাংসের দামে কোনো তফাৎ নেই এবারের ঈদে!
সোমবার (১৭ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোরবানির সংগ্রহ করা মাংসের অস্থায়ী বাজারে দেখা যায় প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম হাঁকা হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
প্রতি বছরের মতো কোরবানির সংগৃহ করা মাংসের বাজার বসেছিল এ দিনও। কিন্তু মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ীদের থাবায় কোরবানির সংগ্রহ করা মাংসের বাজার নিত্যদিনের মতোই চড়া।
মৌসুমি মাংস ব্যবসায়ীরা দুপুরের পর ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষদের কাছ থেকে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে কোরবানির সংগ্রহ করা মাংস কিনে নেন। এরপর ভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তারা এই মাংস বিক্রি করেছেন চড়া দামেই।
প্রতি বছরই কোরবানির শেষে বিকেলে সংগ্রহ করা মাংসের বাজার বসে রাজশাহী মহানগরের বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন স্থান থেকে ভিক্ষুক ও খেটে খাওয়া মানুষ বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা মাংস নিয়ে আসেন এই বাজারে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তাদের কাছ থেকে হাতবদল করে বাজারমূল্যেই সংগ্রহ করা মাংস বিক্রি করেন মধ্যসত্বভোগীরা।
বিকেলের পর শহর ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, শিরোইল বাস টার্মিনাল, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর, দড়িখড়বোনা, লক্ষ্মীপুর, হড়গ্রাম, সরকারি মহিলা কলেজের মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে বসেছে মাংসের বাজার। গত বছর কোরবানির মৌসুমে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংস বিক্রি হয়েছে এই বাজারে। এবার ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোরবানির সংগ্রহ করা খাসির মাংসের দর ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি।
রাজশাহী মহানগরের বিহারি কলোনি (সিরোইল) এলাকার মাংস বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০ কেজি মাংস কেনাবেচা করেছেন। এতে তার ভালোই লাভ হয়েছে।
সোমবার দুপুরের পর আশপাশের পাড়া-মহল্লা থেকে ভিক্ষুক ও দরিদ্র লোকেরা যে মাংস সংগ্রহ করেছেন, তা কিনে নিয়েছেন আমজাদ হোসেন। পরে সেই মাংস ভ্যানে করে বিক্রি করেছেন বেশি দামে। বছরের এই একদিন মাংসের ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে কলোনি এলাকার সাজ্জাদ আলী বলেন, যারা আর্থিক কারণে অথবা সময়ের অভাবে কোরবানি দিতে পারেননি এবং যাদের বড় খাবারের হোটেল আছে তারাই মূলত এই সংগ্রহ করা মাংসের ক্রেতা। পারিবারের জন্য ২/৩ কেজি করে কোরবানির মাংস কিনে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ। আর হোটেল ব্যবসায়ীরা যার কাছে যেমন পান বেশি বেশি করে এই মাংস কিনে রাখেন। তারা কোরবানির মাংস মজুদ করে কয়েক মাস পর্যন্ত খাবার হোটেল পরিচালনা করেন।
কোরবানির সংগ্রহ করা মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন গৌরহাঙ্গা এলাকার ক্রেতা আরিফ শেখ। তিনি বলেন, প্রতি বছরই কোরবানির সংগ্রহ করা মাংসের দাম বাড়ছে। গত বছর ৬০০ টাকা কেজি দরে কোরবানির মাংস পাওয়া গেলেও এ বছর ৭৫০ টাকা কেজি! এভাবে মধ্যসত্বভোগীরা সব জায়গায় হানা দিলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
এ অবস্থা চললে ভ্রাম্যমাণ দোকানে মাংস কিনতে কেউ আর আসবে না। কোরবানির দিনও যদি বাজার দামেই গরুর মাংস কিনতে হয় তাহলে ঈদের একদিন আগেই কেনা ভালো বলে মন্তব্য করেন এই ক্রেতা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
এসএস/এমজেএফ