মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। জেলার প্রধান চার নদীর মধ্যে দুই নদী জুড়ী ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি সীমান্তবর্তী ভারত ও সিলেট হয়ে তার ব্যাপক পরিধি নিয়ে প্রবাহিত বলে এর পানি নেমে যেতে আরও কিছুদিন লাগতে পারে। উজান থেকে মনু-ধলাই নদীতে পানি আসা বন্ধ রয়েছে। এতে এ দুটি নদীর পানি বাড়ছে না এ মুহূর্তে।
জাবেদ ইকবাল জানান, ধলাই নদীর ১৪টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তিনটি পয়েন্টে ভাঙন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দুই লাখ ৮১ হাজার ৯২০ জন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যার পানিতে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে জেলার অসংখ্য গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয় স্থাপনা।
বন্যার পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করায় প্রশাসনের তরফে জেলাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ২০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিয়েছে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবার। তবে অনেক এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পানিবন্দি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে সড়কের পাশের খালি দোকানঘর কিংবা দূরের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। বিশেষ করে গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তা পরিবারগুলোর মধ্যে।
সরেজমিন কমলগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের একটি বড় অংশ। এতে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন দূরের স্বজন কিংবা সড়কের পাশের দোকানঘরে।
কমলজিৎ সিংহ নামে এক বাসিন্দা জানান, বন্যার পানিতে বাড়ি তলিয়ে গেছে। তাই আশ্রয় নিয়েছি এ দোকানঘরে। পরিবার নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। কবে পানি নামবে তাও জানা নেই। তিনি যে ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানের পাশের বারান্দায় রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের গবাদিপশুগুলোকে। ওই এলাকার বাড়িঘর ছাড়াও মসজিদ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে বন্যার পানি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে প্রায় ১৪টি পয়েন্ট। কুলাউড়া উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৭৫টি গ্রামের মোট ৮১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। জুড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার মানুষ। আর রাজনগর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ছয় হাজার ২৫৩ জন বন্যার্ত মানুষ। গবাদিপশুর সংখ্যা ২০০টি। কার্যরত মেডিকেল টিম রয়েছে ৭০টি। শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৪৬৫ প্যাকেট, রান্না করা খাবার এক হাজার ২০০ প্যাকেট, জিআর চাল ৪২২টন, জিআর ক্যাশ দুই লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ৬৫ হাজার পিস। বিশুদ্ধ পানি ২৪০টি, ১০টি লিটারের বোতল।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, বন্যাকবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ৬৫ হাজার সরবরাহ করা হয়েছে। ৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জেলায় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে ৪২২ মেট্রিক টন।
আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও পানিবন্দি গ্রামের বন্যার্তদের মধ্যে চাল-শুকনো খাবার বিতরণ করে চলেছি বলেও জানান মৌলভীবাজার ডিসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৪
বিবিবি/আরবি