ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

কেউ রইলো না আবুল কালাম আজাদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
কেউ রইলো না আবুল কালাম আজাদের আজাদের শাহানাজ আক্তার মুন্নী, দুই মেয়ে তাসদিয়া ও তাহিয়া।

মাদারীপুর: শিবচরের ভদ্রাসন চরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, ব্যাংকে চাকরির সুবাদে বসবাস করেন ঢাকায়। বোনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি।

বরগুনায় ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে আজাদের স্ত্রী-সন্তানও ছিলেন। আজাদ বেঁচে আছেন, কিন্তু হয়েছেন পারিবারিকভাবে নিঃস্ব। পরমাত্মীয়দের হারিয়ে তিনি এখন বাকরুদ্ধ।

রোববার (২৩ জুন) সকালে আজাদের স্ত্রী ও মেয়েদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে শিবচরে, নিজ বাড়িতে। এর আগে গতকাল শনিবার (২২ জুন) তাদের মরদেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন তিনি।

আজাদের এ পরিস্থিতি দেখে বিচলিত তার পাড়ার পরিচিত স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বরগুনার দুর্ঘটনায় আজাদের কেউ বেঁচে রইলো না। বোনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। সবাইকে এক সাথে হারাল। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও কাছে নেই। সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলিতে ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে আমতলী যান ভদ্রাসনের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী শাহানাজ আক্তার মুন্নী, দুই মেয়ে তাসদিয়া ও তাহিয়া। আগের দিন বুধবার একই ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামে আজাদের বোন ফরিদা বেগম, ভাবি ফাতেমা বেগম, দুই ভাগ্নে মাহাবুব খান, সোহেল খান, তার স্ত্রী রাইতি, রাইতির মা রুমি বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা ও আত্মীয় স্বজন ওই অনুষ্ঠানে যায়। শুক্রবার বিয়েতে সবাই অংশ নেয়।

শনিবার ছিল বৌভাত। এতে যোগ দিতে মাইক্রোবাসে চড়ে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুরে বরগুনার আমতলিতে যাচ্ছিলেন আজাদ। হলদিয়া-চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে তাদের মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে যায়।

পানিতে আটকা পড়ে নিহত হন আজাদের স্ত্রী-সন্তান, বড় ভাই বাবুল মাদবরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন ফরিদা বেগম, ফরিদা বেগমের ছেলে সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি বেগম, রাইতির মা রুমি বেগম।

আজাদের বাড়ি দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে বাংলানিউজ। শোকের পাথর হওয়া আজাদ মৃদু স্বরে কথা বলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর সবার টনক নড়ে। এর আগে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো আমাদের এত বড় ক্ষতি হতো না। আমার জীবনের কিছু রইলো না আর। সব হারিয়ে ফেললাম। আমার সন্তানেরা কেউই বাঁচল না। সব শেষ আমার।

ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রহিম বেপারী বলেন, একইসঙ্গে এক পরিবারের সাতজনের মৃত্যু দেখাটা খুব কষ্টের। আমি ও এলাকাবাসী খুবই মর্মাহত। যে ব্রিজটি ভেঙে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনের গাফিলতি ছিল। এ ঘটনায় যাদের কর্তব্যে অবহেলা ছিল সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তি দাবি করছি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজনের নিহতের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা নিহতদের দাফন কাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা করে মোট ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ