ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই যুব সমাজকে মাদক থেকে রক্ষা করতে পারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৪
ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই যুব সমাজকে মাদক থেকে রক্ষা করতে পারে

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেছেন, ‘ইসলামের ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চাই পারে মাদকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আদর্শের যথাযথ অনুসরণই মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের যুব সমাজকে বাঁচতে পারে।

ইসলাম ধর্মের নৈতিক শিক্ষাই পারে আমাদের সমাজ মাদকসহ অপরাধ থেকে বাঁচাতে। কিশোর গ্যাং, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের পেছনে মাদকের অবৈধ ব্যবসা ও অপব্যবহার অন্যতম কারণ। মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশ তরুণ-যুবসম্প্রদায়। তাই পরিবার থেকে বাবা ও মাকে সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য। ’

বুধবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে মাদকের ভয়াবহতা, যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথি ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘১৯৮৭ সাল থেকে ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। ’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার চিফ কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় সিম্পোজিয়ামে আরও আলোচনা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির, বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএসএমএমইউ বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দেওয়ান মো. সাজ্জাদ প্রমুখ।

সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর নূর নবী মানিক।

ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ বাড়ানোর জন্য প্রধানত দায়ী করেছেন সারা দেশে মাদকের অবাধ বিস্তারকে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার অপরিপূর্ণতা, আকাশ সংস্কৃতি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যেখানে সেখানে পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবেই দিন দিন এসব অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা। ’

বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, ধূমপানসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে, তা অনেকেরই অজানা। মাদক সেবন করার কারণে স্মরণশক্তি ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। যৌনশক্তি নষ্ট হয় ও সেই থেকে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও যুবক সমাজের মেধা নষ্ট করে দেয়। লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। মাদকের কারণে মেধাহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে আমাদের দেশে। ’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের মৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ। যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ড। বাংলাদেশে ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে। অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ।

সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমাদের দেশের চার শ্রেণির মানুষ মাদক সেবন করে। একটি হলো নিম্নবিত্তের মানুষ। যুব সমাজ যারা হতাশা থেকে মাদক সেবন করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং ওপরের তলার মানুষ যারা বিভিন্ন ক্লাবে বসে পার্টি করে। জেলখানায় ৯৮ শতাংশ মাদক মামলার আসামি। ৪০ শতাংশ মাদক আবার কেনা-বেচা হয় জেলখানায়। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মাদকের প্রসার আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৪
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।