ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৃক্ষমেলায় ৩৯ দোকানের মধ্যে ৩৮টিই ফুচকা-প্রসাধনীর, নার্সারি একটি! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৪
বৃক্ষমেলায় ৩৯ দোকানের মধ্যে ৩৮টিই ফুচকা-প্রসাধনীর, নার্সারি একটি! 

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ‘বন বিভাগের আয়োজনে’ ১৫ দিনব্যাপি বৃক্ষমেলা। অথচ কিছুই জানে না জেলা বন বিভাগ।

আর বৃক্ষমেলার মাঠজুড়ে ফুচকা-চটপটিসহ কসমেটিকস, প্রসাধনীর দোকান। তবে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  

শুক্রবার (৫ জুলাই) সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর বন বিভাগের আয়োজনে ও গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় গত ০১ জুলাই থেকে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে ১৫ দিনের বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় মোট ৩৯টি স্টল বসেছে। এর মধ্যে ৩৮টিই ফুচকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনী ও শিশুদের খেলনার বিভিন্ন রাইড দিয়ে সাজানো। শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। মেলার একদম এক কোনে রয়েছে গাছের চারা বিক্রির একটি মাত্র স্টল। মেলার মাঠে পর্যাপ্ত গাছের চারা বিক্রির স্টল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।  

এদিকে, মেলায় থাকা প্রতিটি স্টল থেকে এক হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেটে ভাড়া উত্তোলন করার অভিযোগ করেছেন স্টল মালিকরা।  

তবে এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন বলছে, মেলায় বসা কোনো স্টলে ভাড়া দিতে হবে না।  

অন্যদিকে, মেলার মূলফটকে বন বিভাগ শরীয়তপুর নাম লেখা থাকলেও গোসাইরহাটে এমন কোনো বৃক্ষমেলা বন বিভাগ আয়োজন করেনি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। অথচ উপজেলা প্রশাসন বলছে, মেলাটির আয়োজক বন বিভাগ। আর সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপজেলা প্রশাসন।  

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এই মেলা দিয়ে উপজেলায় বৃক্ষরোপণের কোনো উপকারই হবে না। কেননা, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা গাছের চারা কিনে রোপণ করার জন্য যে টাকা বরাদ্দ নিয়ে আসছেন, সেই টাকায় বৃক্ষমেলা থেকে কসমেটিকস-প্রসাধনী কিনে আর আচার-ফুচকা খেয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।  

কয়েকজন দর্শনার্থী বলেছেন, বৃহস্পতিবারও (৪ জুলাই) মেলায় এসেছিলাম। মনে করেছিলাম বিভিন্ন ধরনের গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু কেনার মতো কোনো গাছ পাইনি। মনে হচ্ছে এমন যেন আনন্দ মেলায় এসেছি। এই মেলাটি তরুণ প্রজন্মের জন্য বা উপজেলাবাসীর জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনবে বলে আমাদের মনে হয় না। কারণ, বৃক্ষমেলায় বৃক্ষ নেই!

গোসাইরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন শিকদার বলেন, বৃক্ষমেলাটি কি আনন্দ মেলায় রূপান্তর হলো? এ প্রশ্ন আমার। আসলে যে উদ্দেশে এখানে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এটা নামে মাত্র বৃক্ষমেলা বলেই আমি মনে করি। মেলার মাঠ ঘুরে আমি যা দেখলাম, এটা কখনও বৃক্ষমেলা হতে পারে না। বৃক্ষমেলা যেন, বৃক্ষমেলাই হয় -এই দাবি রাখছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি স্টলের মালিক বলেন, মেলায় বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে মেলা আয়োজক কমিটিকে।  

মেলার একমাত্র গাছের চারা বিক্রির স্টলের কর্মচারী রবিউল বলেন, অধিকাংশ মানুষ মেলার নৌকা ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করে, গাছ কিনেন না। শুক্রবার তেমন বিক্রি হয়নি। ১ জুলাই মেলার শুরু পর থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।

গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী বলেন, আমি গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছি। আমার শেষ অফিসের দিন দেখেছি, গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ মহোদয় মাঠে মেলার জন্য দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কিসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারির দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা? এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, মূল ফটকে কি লেখা রয়েছে তা আমি জানি না। গোসাইরহাটে মেলা করার জন্য বন বিভাগের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো আয়োজনও বন বিভাগ করেনি। গোসাইরহাটের বৃক্ষমেলাটির আয়োজন হয়তো উপজেলা প্রশাসন করেছে। আয়োজকের স্থলে বন বিভাগের নাম তারা ভুলে লিখেছে হয়তো।

এ ব্যাপারে গোসাইরহাট ইউএনও আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কিসের ভাড়া? 

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ইউএনও আর কোনো প্রশ্ন শুনতে বা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।